বিজেপিকে কড়া হুঁশিয়ারি মমতার- ক্ষমতায় এসে কেউ যদি লেনিন, গান্ধী, নেতাজির মূর্তি ভেঙে তান্ডব করে আমি তার প্রতিবাদ করবোই

রাজ্য
শেয়ার করুন

এত ঔদ্ধত্য ভালো নয়, এত অহঙ্কার ভালো নয়, আমরা বলি না অতি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে। অতি পড়তে দর্প করো না, হুঙ্কার মানুষ মাটিতে মিশিয়ে দেবে। মানুষই গণতন্ত্রে সবেচেয়ে বড় হুঙ্কার দিতে পারে। আর কেউ দিতে পারে না। মানুষের রায় মাথা পেতে নাও। নিয়ে কাজ করো। অত্যাচার-সন্ত্রাস বন্ধ করো।

সিপিএম রোজ আমায় গালাগালি দেয়, মনে রাখবেন আজও ওরা বিজেপির লজেন্স খায়। আমরা খাই না। আমাদের ওটা নেচার নয়।সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া থাকতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস কখনও এসব বোঝাপড়া করে না। তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের জন্য সর্বস্ব দিতে পারে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস বোঝাপড়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।

Published on: মার্চ ৬, ২০১৮ @ ২১:১০

এসপিটি নিউজ, পাত্রসায়র, ৬ মার্চঃ নোটবন্দি নিয়ে দেশে প্রথম যদি কেউ বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে থাকেন তবে তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীরব মোদির বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে সারা দেশে সব চেয়ে আগে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক তেমনভাবেই ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে আগরতলায় প্রকাশ্যে বুলডোজার দিয়ে লেনিনের মূর্তি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মুমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, লেনিন তাঁর নেতা নয়, কিন্তু তিনি রাশিয়ার একজন মনীষী। মতাদর্শগত বিরোধ সিপিএমের সঙ্গে থাকতেই পারে তিনি এও জানেন সিপিএম কিভাবে অত্যাচার করেছে। কিন্তু সেটা রাজনৈতিকভাবেই লড়াই করা উচিত।বিজেপি যদি মনে করে ক্ষমতার এসে তারা লেনিন, গান্ধী, নেতাজি, স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি ভেঙে গুড়িয়ে দেবে তিনি তা মেনে নেবেন না। প্রতিবাদ তিন করবেনই। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে বিজেপিকে সেই হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি সিপিএমকেও ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি বলেন, সিপিএম রোজ আমায় গালাগালি দেয়, মনে রাখবেন আজও ওরা বিজেপির লজেন্স খায়।

আমি একটা সরকারে এসছি। আমার এটা কাজ নয় কারও উপর হামলা করা। আমি একটা সরকারে এসছি আমার এটা কাজ নয় কোনও মনীষির মূর্তি ভেঙে দেওয়া। গান্ধিজির প্রতি আমাদের যেমন সম্মান আছে নেতাজির প্রতি আমাদের সম্মান আছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি আমাদের সম্মান আছে নজরুলের প্রতি আমাদের সম্মান আছে। বিরশা মুন্ডার প্রতি আমাদের সম্মান আছে। বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে বাবা সাহেব আম্বেদকর, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ থেকে একেবারে এ পি যে আব্দুল কালাম প্রত্যেককে আমরা সম্মান করি। কারণ আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করি এবং আমরা সার্বজনীন রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি।বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর কথায়, তিন দিন আগে ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে একটা রাজনৈতিক দল টিম টিম করে জ্বলছে। তারা মাত্র ০.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আমার বাঁকুড়া জেলার মতো নয় বাঁকুড়া জেলায় যা ভোটার আছে তার অর্ধেকও হবে না। হাওড়া জেলায় যা ভোটার আছে ৩৮ লক্ষ ওখানে ভোটার মাত্র ৩২ লক্ষ। জোরজবরদস্তি দখল করে টাকার প্রভাব খাটিয়ে…… আরে রাজনৈতিকভাবে লড়াই করুন। আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন আপনারা একটা জায়গায় ক্ষমতায় এসছেন বলে মার্কসের মূর্তি ভাঙবেন, লেনিনের মূর্তি ভাঙবেন, গান্ধীজীর মূর্তি ভাঙবেন, নেতাজির মূর্তি ভাঙবেন, স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙবেন এটা আমরা মেনে নেব না। আমার সাথে সিপিএমের লড়াই হয়েছে। আমরাও ৩৪ বছর পর ক্ষমতায় এসছি। মনে রাখবেন আমাদের স্লোগান ছিল বদলা নয়, বদল চাই। তাই সিপিএম এত অত্যাচার করার পরেও আমরা কিন্তু পিঁপড়ের ডিমের মতো সিপিএমের উপর অত্যাচারও করিনি। তার কারন এটা আমাদের নেচার নয়।আমি সিপিএমের পক্ষে নই আমি সিপিএমের বিরুদ্ধে।

মমতা বলতে থাকেন, কার্ল মার্কস আমার নেতা নয়, লেনিনও আমার নেতা নয়। কিন্তু রাশিয়ায় কার্ল মার্কস লেনিন একটা ম্যাটার। এক একটা জায়গায় এক একজন নেতা আছেন ম্যাটারও আছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জন। মনে রাখবেন যে যে পার্টির সমর্থকই হোন না কেন আজকে বলছে তারা-তাদের ভালো লাগছে। আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তান্ডব করে। আমি ন্যাশনাল মিডিয়াকে বলব আন্তর্জাতিক মিডিয়া অবশ্যই, কি হল এখন চোখে দেখতে পাচ্ছেন না, এখন কি চোখে ঠুলি দিয়েছেন নাকি মিডিয়া টোটাল পারচেজড। বাংলার দু-একটা মিডিয়া অবশ্য এই নিয়ে লেখালিখি করছে। ভেঙেচুরে তছনছ করে তান্ডব করা হচ্ছে কেউ কোনও প্রতিবাদ করছে না আমি কিন্তু করব। আমরা কিন্তু করব।

এখানেই না থেমে মমতা বলতে থাকেন, আমার কাছে সিপিএমের বিরুদ্ধে ইডিওলজিক্যাল লড়াই আছে বার বার থাকবে তাদের অত্যাচার আমি সমর্থন করি না তেমনি বিজেপির অত্যাচারও আমি সমর্থন করি না, এটা মাথায় রাখবেন। সিঙ্গুরে সিপিএমের অত্যাচার সমর্থন করিনি, নন্দীগ্রামে সমর্থন করিনি। নেতাইয়ে সমর্থন করিনি। আপনাদের বাঁকুড়ায় আমার বেশ মনে আছে একটা ঘটনা ঘটেছিল, প্রায় ৫৭০জনকে গ্রেফতার করা হল।আমার সব মনে আছে। আমি ভুলি না। কিন্তু প্রতিবাদ কাউকে করতে হবে।গণতন্ত্র মানে জোর-দখল নয়।গণতন্ত্র মানে মানুষের উন্নয়নের কাজ করবে। আমরা উন্নয়নের কাজ করছি। যদি লড়তে হয় উন্নয়নের সঙ্গে লড়ো। গড়তে হয় উন্নয়ন দিয়েই গড়ো। তৈরি করতে হলে উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় নাম লেখাও। আমি তো সবসময় বলি-লড়তে হলে লড়ো, আর গড়তে পারলে গড়ো, আর না পারলে মানে মানে সরে পড়ো। তোমাদের দ্বারায় কিছু হবে না। হাতে দড়ি আর কলসি জনগন দিয়ে দেবে তাই দিয়ে কি করতে হয় সেটা জানেন।

সুতরাং এত ঔদ্ধত্য ভালো নয়, এত অহঙ্কার ভালো নয়, আমরা বলি না অতি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে। অতি পড়তে দর্প করো না, হুঙ্কার মানুষ মাটিতে মিশিয়ে দেবে। মানুষই গণতন্ত্রে সবেচেয়ে বড় হুঙ্কার দিতে পারে। আর কেউ দিতে পারে না। মানুষের রায় মাথা পেতে নাও। নিয়ে কাজ করো। অত্যাচার-সন্ত্রাস বন্ধ করো। বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, সিপিএম রোজ আমায় গালাগালি দেয়, মনে রাখবেন আজও ওরা বিজেপির লজেন্স খায়। আমরা খাই না। আমাদের ওটা নেচার নয়।সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া থাকতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস কখনও এসব বোঝাপড়া করে না। তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের জন্য সর্বস্ব দিতে পারে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস বোঝাপড়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের এজেন্সি দিয়ে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। বদনাম করার চেষ্টা করা হয় রোজ। ৩৬৫দিন। তাও বলি এসব হুমকির কাছে আমরা ভয় পাই না।যতদিন বাঁচব রবীন্দ্রনাথের বাংলায় মাথা উঁচু করে বাঁচব।নজরুলের বাংলায় মাথা উঁচু করে বাঁচব। স্বামী বিবেকানন্দের বাংলায় মাথা উঁচু করে বাঁচব। বিরশা মুন্ডার বাংলায় মাথা উঁচু করে বাঁচব। দেশে মাথা উঁচু করে বাঁচব।  আত্মসম্মান খুঁইয়ে বাঁচা আমি মনে করি মৃত্যুর সমান।

গরিব মানুষের লোন মুকুব করে না, কৃষকদের লোন মুকুব করে না। ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে না খেতে পেয়ে।আর কয়েকটা রুই-কাতলা আপনি ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমা দিয়েছেন আপনার কষ্টের টাকা মেরে দিয়ে পালিয়ে গেছে। আর আজকে ব্যাঙ্ক হয়ে গেছে ক্যাশলেশ আর বিজেপি সরকার হয়ে গেছে ফেসলেস। তৃণমূল যদি মানুষের কথা না বলে তাহলে আগামীদিন মানুষকে চোখে সরষে ফুল দেখতে হবে বিজেপি সরকারের অত্যাচারে। মানুষ যদি বিপদে পড়ে সেই বিপদে তৃণমূল কংগ্রেস পাশে ছিল আগামীদিনেও থাকবে। সর্ব ধর্ম সমন্বয় করব। একতাই সম্প্রীতি। এটা তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিখিয়েছেন।

মনে রাখবেন, এক টুকরো মাংস বিজেপি কাউকে দিয়ে খেলিয়ে দেবে আর তাতে মানুষের জীবন কেড়ে নেবে। ঘরে-বাইরে আগুন জ্বালিয়ে দেবে। এই খেলায় মদত দেবেন না। এই খেলা করবেন না। আগুন লাগানো খুব সহজ। একটা দেশলাই কাঠিতেই আগুন জ্বেলে যায়। আর আগুনে পুড়ে যায় ঘর। একটা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, বাড়িটা ভালো রাখতে হবে। জমিটা ভাল রাখতে হবে।বলেন মমতা।

ছবিঃ ফেসবুক

Published on: মার্চ ৬, ২০১৮ @ ২১:১০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + = 4