দুয়ারে রেশন সহ একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করে মমতা বললেন-আমরা গর্বিত, অন্যান্য রাজ্য এটি মডেল করছে

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ১৬, ২০২১ @ ২৩:৩৯
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৬ নভেম্বর:  আজ কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দুয়ারে রেশন’ সহ একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে ২১ হাজার রেশন ডিলারের মাধ্যমে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ উপকৃত হবেন বলেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি বলেন- ‘আমরা গর্বিত , আজ আমাদের এই প্রকল্পকে অন্যান্য রাজ্য মডেল করছে। ‘দুয়ারে রেশন’-এর পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটবট, রেশন কার্ডের আন্তঃরাজ্য বহনযোগ্যতা ও ‘খাদ্যসাথী – আমার রেশন’ নামক একটি মোবাইল অ্যাপও চালু করা হল।

কিভাবে বিলি হবে দুয়ারে রেশন

এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত রেশন ডিলাররা নির্দিষ্ট দিনে তাঁদের এক্তিয়ারে থাকা সমস্ত উপভোক্তাদের পাড়ায় পাড়ায় ৫০০ মিটারের মধ্যে গাড়ি নিয়ে গিয়ে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেবেন। এজন্য প্রত্যেক রেশন ডিলার একজন করে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। তাদের বেতন দশ হাজার টাকা করে দিতে হবে। এজন্য রাজ্য সরকার পাঁচ হাজার টাকা করে দেবে আর বাকি পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে সেই রেশন ডিলারকে। বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নবান্ন মানে হল- নতুন ধান

মমতা বলেন- এটা আমাদের গর্ব। গর্ব তাকে নিয়ে করা যায় যাকে ভালোবাসা যায়।  রেশন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়াটা সেবার কাজ। বিনা পয়সায় খাদ্য, বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য, বিনা পয়সায় পড়াশুনো। আমরা ভাবি আর একটু হলে ভালো হতো। টাকা থাকলে আমি বিলিয়ে দেব। না থাকলে কোথায় দেব। এখানে দারিদ্র্যতা ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। কোভিডের সময় আমরা গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দিয়েছি। আমরা সাড়ে আট কোটি লোককে টিকা দিয়েছি। কত লোককে সেবা করেছি। গাড়ি পাঠিয়ে রাজস্থান থেকে নিয়ে এসেছি। এর চেয়ে মানবিক সরকার পাবেন না। আশা করতে করতে নিরাশা বাড়বে। আগে একটা রেশন দোকানের ডিলারকে জমিদার ভাবতাম। দশ কোটি ৪০ লক্ষ লোকের কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন। আজ কিন্তু চাল কিনি আমাদের চাষি ভাইদের কাছে। আমাদের সেক্রেটারিয়েটের নাম নবান্ন। নবান্ন মানে হল- নতুন ধান। আমি জানি নবান্নের প্রয়োজন কি।”

‘এখন থেকে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে প্রত্যেকে বাড়িতে বসে রেশন পাবে’

রেশন ডিলারদের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন- “এখন থেকে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে প্রত্যেকে বাড়িতে বসে রেশন পাবে। ‘খাদ্যসাথী আমার রেশন’ নামে একটা অ্যাপ চালু করা হল। ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে দুয়ারে সরকার চালু করেছিলাম। কয়েক কোটি মানুষ এসেছিল এখানে। আর একটা হল পাড়ায় পাড়ায় সমাধান। নভেম্বর, ডিসেম্বরে আবার হবে। ১০ কোটির বেশি মানুষকে ফ্রি রেশন দেওয়া হয়। বিভিন্ন পুজো-পার্বনে আমরা কম পয়সায় চিনি, ছোলা, আটা দিয়েছি। এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারিগর হল রেশন ডিলার, রেশন দোকানে কাজ করে যারা তারা। খাদ্যসাথীর সঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডারের সম্পর্ক আছে। আপনাদের আমি কুর্নিশ জানাই।”

ডিলারদের লাইসেন্স ক্যাপিটাল অনেকটাই কমালেন মুখ্যমন্ত্রী

“দুয়ারে রেশন প্রকল্পে কমিশন ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়েছে। ২১ হাজার গাড়ি লাগবে। যদি কেউ নিজের গাড়ি ব্যবহার করেন তাদের এক লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। ডিলারদের লাইসেন্স ক্যাপিটাল আগে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হত। এখন সেটা এক লক্ষ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সেটা এবার ৫০ হাজার টাকায় নিয়ে আসার কথা বলছি। তাতে অনেকে উতসাহিত হবে।অনেকে কাজের সুযোগ পাবে।” বলেন মমতা।

‘চিৎকার করলে পাওয়া যাবে না’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন রেশন কার্ড- আধার কার্ড লিঙ্কের সময় রেশন ডিলারদের কার্ড প্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা করে দেওয়া হয়েছে বলতেই দর্শক আসন থেকে সমস্বরে চিৎকার করতে থাকেন ডিলাররা।  মুখ্যমন্ত্রী তাদের জিজ্ঞাসা করেন- আপনারা পাননি? সমস্বরে বলে ওঠেন না। এই সময় মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সচিবের কাছে জানতে চান- বলছে পায়নি। তিনি তখন এসে কথা বলেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন-  “চিৎকার করলে পাওয়া যাবে না। বলেছো, ইশারাই কাফি। বিল লাগালেই পাওয়া যাবে। ওটা একটু সরলীকরণ করা হয়েছে।”

কেউ চলে যাচ্ছেন কোর্টে, কেউ যাচ্ছেন জোটে, কেউ দিচ্ছেন ঘেটে

“শহরে রেশন দোকানের জায়গাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস চাষিদের স্বার্থে ১৮৬৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৪০ টাকা করেছি।সিপিসিতে ধান বিক্রি্র জন্য ২০টাকা বোনাসও দেওয়া হবে। এবছরও আমরা ৫৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান প্রকিউর করবো।এই প্রসেস অনলাইন করা হয়েছে। কৃষকরা তিন মাসের মধ্যে ধান বিক্রির টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। এতক্ষন ধরে যে্টা উপলব্ধি করলাম তা হৃদয় দিয়ে। এক নম্বর- কেউ চলে যাচ্ছেন কোর্টে, কেউ যাচ্ছেন জোটে, কেউ দিচ্ছেন ঘেটে। কেউ দিচ্ছেন প্রকল্পটাকে কেটে- এটা করবেন না দয়া করে। সে সরকার মানবিক হয় সে কিন্তু মানুষের স্বার্থ বেশি দেখে। আপনারা যেহেতু মানুষের স্বার্থ দেখছেন সেহেতু আমরাও আপনাদের স্বার্থ দেখব।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জ্যোৎস্না মান্ডি প্রমুখ। এদিন এই অনুষ্ঠান থেকে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের কিছু গাড়ি উদ্বোধন করেন।

Published on: নভে ১৬, ২০২১ @ ২৩:৩৯


শেয়ার করুন