SAFE WILD-স্বর্গে পাখিরা: আলবেনিয়ায় ফ্লেমিংগোরা লকডাউনে শান্তি খুঁজে পেয়েছে

Main কোভিড-১৯ বন্যপ্রাণ বিদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। মানুষের পাশাপাশি এখন বন্য জীবজন্তুও নিরাপদ নয়। তাদের বিষয়েও নজর রাখা শুরু হয়েছে। সারা বিশ্বে এরকম একাধিক ন্যাশনাল পার্ক আছে। যেখানে রয়েছে নানা প্রজাতির জীবজন্তু। এই সময়ে তারা কেমন আছে। সেই খবর আমরা বিভিন্ন সূত্র ধরে জানার চেষ্টা করেছি। সংবাদ প্রভাকর টাইমস ‘সেফ ওয়াইল্ডলাইফ’ শিরোণামে এক ধারাবাহিক প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজ দ্বিতীয় পর্ব।

Published on: এপ্রি ২৪, ২০২০ @ ০০:০১

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, ২৩ এপ্রিল:    করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে মানুষের ঘুম কেড়ে নিলেও বন্যজীব, পাখি, জলজীবদের মনে সুখ এনে দিয়েছে। তারা আজ মুক্ত বাতাসে মহানন্দে ছুটে বেড়াচ্ছে। তেমনই আনবেনিয়ার গোলাপী ফ্লেমিংগো এবং কোঁকড়ানো পেলিকানরা পশ্চিম উপকূলরেখার উপর দিয়ে ডানা মেলে প্রশান্তিতে উড়ে চলেছে।

সব আজ লকডাউনে ওরা তাই আনন্দে

পর্যটকদের আবাস, বন্দরের নৌকা এবং কারখানাগুলি আজ লকডাউনে চলে গিয়েছে। রাস্তাঘাট যানবাহন মুক্ত। নদীতে স্টিমার-জাহাজ চলাচল বন্ধ। দূষণ এখন নেই বললেই চলে। তাই ওদের আজ বড়ই আনন্দের দিন। ঝাঁকে ঝাঁকে হাজার হাজার ফ্লেমিংগো অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলে উড়ে আসায় নারতা লেগুনের জল ফুলেফেপে উঠছে।পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জানুয়ারির পর থেকে তাদের সংখ্যা প্রায় 3,000 বেড়েছে।

বন্যজীবীরা তাদের সমস্ত অধিকার ফিরে পেয়েছে

সুরক্ষিত অঞ্চলের প্রধান নেক্সশিপ হায়সোলাকোজ সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, “মানুষেরা বাড়িঘরকে লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসার সাথে সাথে বন্যজীবীরা তাদের সমস্ত অধিকার ফিরে পেয়েছে এবং প্রকৃতির সমস্ত স্বাধীনতা তারা ভোগ করছে।” সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেখা গিয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে বেপরোয়াভাবে প্রসারিত হয়েছে নগরায়ন। একের পর এক পর্যটন কেন্দ্র গজিয়ে উঠেছে। সেখানে ভিড় করেছে মানুষ। শিল্প ক্রিয়াকলাপ কংক্রিটের পাহাড় দ্বারা ঘিরে থাকা সুরক্ষিত অঞ্চলে বাস্তুসংস্থানকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

সব আজ বন্ধ

৯ মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের ফলে লকডাউন অবশ্য এই সমস্ত প্রাণীকুলকে তাদের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছে।মাছ ধরার নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ উধাও হয়েছে, ডজন খানেক ফেরি এবং অন্যান্য ভেসেল যা সাধারণত ভ্লোরার বন্দর থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যায় সেগুলির চলাচল বন্ধ হয়েছে।এমনকী, এই উপকূল থেকে ৫০০ মিটার দূরে ব্যস্ততম রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা আগের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে। কাছাকাছি অবস্থিত কারখানাগুলির বর্জ্য জলকে যেভাবে দূষিত করত তাও আজ বন্ধ হয়েছে। এর ফলে প্রাণীদের জীবনে আজ স্বস্তি ফিরেছে। তারা স্বাধীনভাবে চলেফিরে বেড়াতে পারছে।

ভালবাসার সময়‘ –

এটাই আজ প্রাণীকুলের কাছে শাপে বর হয়েছে। সংরক্ষণবাদীরা আশা করছেন-নীরব নিখুঁত নির্জনে থাকা পাখিদের স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াতে এবং সঙ্গম করতে উৎসাহিত করবে।একই সঙ্গে হিশোলোকাজ বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে দম্পতিরা “কিছুটা দূরে উপত্যকায় চলে গিয়েছিল এবং এখন তারা অবশ্য ফিরে এসে আদালতের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করছে”।আলবেনিয়ার প্রথম পাখি গাইডের লেখক মিরজান টোপি বলেন,  বালকান রাজ্যে ফ্লেমিংগো পুনরূৎপাদন শুরু করার জন্য শর্তগুলি একেবারে সঠিক।তিনি বলেন, “পাখিরা সাধারণত তাদের যৌন সম্পর্ক না হওয়া অবধি ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে ভ্রমণ করে।”পার্কের সমীক্ষায় দেখা গেছে, আজ এই দীঘিতে আফ্রিকা, ইতালি, গ্রীস, স্পেন এবং ফ্রান্স থেকে পাখিরা চলে এসেছে।

ওদের মন খুলে খাওয়া আর নাচ করার সময়

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ওডিসে চেলোয়ালিয়াজ রীতিমতো উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলছিলেন- তিনি যখন তাঁর বাইনোকুলারে চোখ রেখেছেন তখন ঝাঁকে ঝাঁকে ফ্লেমিংগো উড়ে যেতে দেখেন। তিনি বলেন- এটা ওদের কাছে একে অপরকে ভালোবাসার সময়।ওরা কিভাবে নিজেদের ব্যস্ত রাখবে তা দেখার পক্ষে যথেষ্ট। কারণ, এখন ওদের মন খুলে খাওয়া আর নাচ করার সময়।

পেলিকানদের বাসা

উত্তরে মাত্র ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) এর নীচে দিবজাকা জাতীয় উদ্যান। সেখানে আলবেনিয়ার বৃহত্তম উপকূলের আধিকারিকরাও আশা করছেন যে শান্ত ডালমাতিয়ান পেলিকানদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এ এক দারুন সময়।প্রায় 85 জোড়া পেলিকান লেগুনের মাঝখানে একটি ছোট্ট দ্বীপে বাসা বাঁধছে, স্থানটি একটি বালুকাময় স্থান দ্বারা অ্যাড্রিয়াটিক থেকে পৃথক করা হয়েছে।

পার্কের পরিচালক আর্দিয়ান কোসি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গত তিন দশকে্র মধ্যে এখন তা সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছেছে।তবে এই অঞ্চলটি ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্পের দ্বারা হুমকির মধ্যে রয়েছে, প্রতিমাসে প্রায় 50,000 দর্শনার্থীর আগমন হয়।লকডাউনের ফলে আজ রীতিমতো রেস্তোঁরা ও হোটেল সহ কয়েক ডজন অবৈধভাবে নির্মিত ভবন বন্ধ রয়েছে। ফলে পেলিকান, প্লাস ফ্লেমিংগো, ঈগল এবং ইবিস ফ্যালসিনেলা শান্তিতে জীবন উপভোগ করছে নির্জন এলাকাগুলিতে, যেখানে সাধারণত পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।

খারাপ পরিবেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী

কোসি আশা করছেন যে আলবেনিয়ার প্রায় 30 জনের মৃত্যুর কারণে আলবেনিয়ার পর্যটন এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষাকে পুনরায় ভারসাম্যে নিয়ে আসার সুযোগ করে দেব।তিনি বলেন, “আমি স্বার্থপর হয়ে বলব যে কেবল প্রকৃতিই সব ঠিক করে।একই সঙ্গে তিনি মনে করেন- “যে পরিবেশগুলি খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে সেগুলি বন্ধ করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই দরকার।”

Published on: এপ্রি ২৪, ২০২০ @ ০০:০১


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 1 =