দরিদ্রদের শুভেচ্ছাদূত: মাদুরাইয়ের 13 বছরের কন্যাকে রাষ্ট্র সঙ্ঘ দিল অভূতপূর্ব সম্মান

Main কোভিড-১৯ দেশ বিদেশ
শেয়ার করুন

  • তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাইয়ের বাসিন্দা সি মোহনদাস-এর মেয়ে নেত্রা।
  • মেয়ের কথায় আশ্বস্ত হয়ে তারই পড়াশুনোর জন্য সঞ্চিত 5 লক্ষ টাকা গরিবদের পিছনে খরচ করে বাবা মোহনদাস।
  • প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর ‘মন কি বাত’-এর অনুষ্ঠানে ভারতীয় এই কন্যার প্রশংসা করেছেন।
  • ডিক্সন স্কলারশিপ তাকে 1 লক্ষ টাকার পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
  • জেনেভা ও নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্র সঙ্ঘের সম্মেলনে নেত্রাকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
Published on: জুন ৫, ২০২০ @ ২১:৫৯
Reporter: Anirudha Pal

এসপিটি নিউজ, ৫ মেমাত্র 13 বছর বয়সী কন্যার চোখে জল এসে গিয়েছিল সেদিন। যেদিন গোটা দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল। গরিব মানুষগুলির কথা ভেবে তাদের পেটের ভাত জোগাড় হবে কিভাবে, কিভাবে এখন তাদের চলবে।সামান্য এক সেলুন চালিয়ে কষ্টার্জিত আয় সঞ্চয় করে রেখেছিল মেয়ের পড়াশুনোর জন্য বাবা। মেয়ের কাতর অনুরোধে এবং তারই ভরসাতে বাবা মেয়ের জন্য তুলে রাখা সঞ্চিত 5 লক্ষ টাকা সহ মোট সাড়ে আট লক্ষ টাকা এলাকার 1500 গরিব পরিবারের পিছনে খরচ করে ফেলেন। লকডাউনে গরিব মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার আনন্দে আপ্লুত মাদুরাইয়ের 13 বছরের নেত্রা মোহনদাস। তার এই কর্মকান্ডকে কুর্নিশ জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনশ অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড পিস। তারা এই ভারতীয় কন্যাকে গুডউইল অ্যাম্বাসেডর ফর দ্য পুওর বা ‘গরিবের শুভেচ্ছাদূত’ সম্মানে ভূষিত করেছেন।

আমরা এর আগেও দেখেছি বিশ্বে একাধিক অল্প বয়সী মেয়েরা অভাবনীয় অকল্পনীয় কাজ করে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।মেয়েরা যে সবার আগে চিন্তাভাবনা করে যে কোনও বিষয়ে এর আগেও সারা বিশ্ব তার প্রমাণ পেয়েছে। পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই, যিনি পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার জন্য নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে বসেছিলেন। এজন্য তাকে আক্রান্তও হতে হয়েছিল। নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে। জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করে সারা বিশ্বে শোরগোল ফেলে দিয়েছে আরও এক কিশোরী সুইডেনের গ্রেটা থনবার্গ। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তাকেও সম্মানিত করেছে। সেই তালিকায় এবার উঠে এল এক ভারতীয় কন্যার নাম। দক্ষিণ ভারতের মাদুরাইয়ের ১৩ বছরের কন্যা নেত্রা মোহনদাস।

কে এই নেত্রা মোহনদাস

তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাইয়ের বাসিন্দা সি মোহনদাস-এর মেয়ে নেত্রা। বয়স 13 বছর। স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশুনো করে। সেবা তার কাছে অত্যন্ত প্রিয় বিষয়। গরিব মানুষদের জন্য তার মন সবসময় কাঁদে। লকডাউনের সময় তার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল- এবার কি হবে ওই মানুষগুলির। কে দেবে ওদের পেটের ভাত। কিভাবে চলবে ওদের এখন? এসব প্রশ্ন মেয়েটিকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে।আর তখনই সে এক অভাবনীয় কাজ করে বসে।

কি সেই অভাবনীয় কাজ

বাবা সি মোহনদাস মাদুরাইয়ে একটি সেলুন চালায়। এই সেলুনের দোকানের উপরেই তাদের গোতা পরিবার নির্ভরশীল। এখান থেকে যে আয় হয় সেই আয়ের থেকে কিছুটাকা প্রতি মাসে মেয়ের পড়ার পিছনে সঞ্চয় করে রাখেন মোহনদাস। এ কথা মেয়ে জানত। আর সেই ভেবে 13 বছরের কন্যা নেত্রা বাবাকে বলে বসে -“বাবা, তুমি আমার পড়ার জন্য যে টাকাগুলি রেখেছো, ওই টাকাগুলো গরিব মানুষগুলোর খাওয়ার পিছনে খরচ করো। তাহলে মানুষগুলি অন্তত এই লকডাউন পিরিয়ডে খেয়ে পড়ে তো বাঁচতে পারবে।” মেয়ের মুখে এই কথা শুনে সেদিন বাবা মোহনদাসের চোখে জল চলে আসে। যে কথা তারা কখনো ভাবতে পারেনি সেকথা এতটুকু মেয়ে ভেবে বসে আছে। কত সহজে এমনটা বলে দিল। একবারও ভাবল না, এতগুলি টাকা চলে গেলে এই টাকা জোগাড় করা মোটেই সহজ হবে না। তবু ও এমনটা বলে দিল।

মেয়েটি বাবাকে আশ্বাসও দিল

মেয়ের মুখে এই কথাগুলো শোনার পর বাবার চোখে জল দেখে মেয়ে গিয়ে বাবাকে আশ্বস্ত করে। সে তখন বলে- ” বাবা, তুমি ভেবো না, আমরা সবাই মিলে পরিশ্রম করব। আমি পড়াশুনোর দিকে আরও বেশি করে মন দেব। ভাল করে পড়াশুনো করব। দেখবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। টাকা আজ আছে। কালও আসবে। কিন্তু এই মানুষগুলির মুখে যদি আমরা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে না পারি তাহলে তো এদের বাঁচানোই যাবে না।আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে, ভাল করে পড়াশুনো করে আমি আইএএস হয়ে সমাজসেবায় ব্রতী হব। তুমি ভেবো না। ওই টাকাগুলো ওদের পিছনে খরচ করো।”

মেয়ের কথায় বাবা আশ্বস্ত হয়ে সাহায্যে লেগে পড়ে

মেয়ের কথায় আশ্বস্ত হয়ে বাবা সি মোহনদাস সেই সঞ্চিত ৫ লক্ষ টাকা এলাকার গরিব মানুষদের পিছনে ব্যয় করেন। মোট সাড়ে আটলক্ষ টাকা খরচ করেন। লকডাউনের সময় উপার্জন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও তারা প্রায় 1,500টি পরিবারকে তারা চাল, ডাল, মুদির দ্রব্য দান করেছেন।এমনকী গরিবদের খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত বন্ধক রেখেছেন। এত বড় আত্মত্যাগ আজকের সমাজে কতজন করে ভাবতে পারেন! এত মহান কাজ করেও তাদের কথা এই সাধারণ পরিবারের কথা তাদের দানের ছবি কেউ কখনো কোথাও দেখতে পেয়েছেন? তারা নীরবে এসব চালিয়ে গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির নজরে এসেছে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কানে গিয়েছে এই পরিবারের আত্মত্যাগের কথা। 13 বছরের একটি মেয়ের বিশাল আত্মত্যাগের কথা। সমাজসেবার মানসিকতার কথা। আর তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’-এর অনুষ্ঠানে বলেছেন নেত্রার কথা। এক সাধারণ ভারতীয় কন্যার অসাধারণ কাজের কথা। প্রশংসিত করেছেন ১৩ বছরের এই সমাজসেবী কন্যা ‘গরিবের বন্ধু’কে। আর তারপরেই এই সংবাদ পৌঁছে গিয়েছে রাষ্ট্র সঙ্ঘের কাছে।

রাষ্ট্র সঙ্ঘ দিল অভূতপূর্ব সম্মান

যখনই বিশ্বে কেউ অভাবনীয় কাজ করে রাষ্ট্র সঙ্ঘের বিশেষ বিভাগ তাকে সম্মানিত করে। ভারতীয় এই 13 বছরের কন্যা নেত্রা সেভাবেই নজরে পড়ে যায় রাষ্ট্র সঙ্ঘের। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশংসা করেছেন তাঁর এই অভাবনীয় কর্মকান্ডকে, যে কিনা নিজের জন্য সঞ্চিত 5লক্ষ টাকা গরিব মানুষের পিছনে খরচ করতে পারে নিঃসঙ্কোচে তাকে সম্মানিত করাটাও যে একটা মহান দায়িত্ব রাষ্ট্র সঙ্ঘের সেকথা তারাও বুঝেছিল। আর তাই ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড পিস 13 বছর বয়সী নেত্রা মোহনদাসকে গুডউইল অ্যাম্বাসেডর ফর দ্য পুওর বা ‘গরিবের শুভেচ্ছাদূত’ সম্মানে ভূষিত করেছেন।যা কোনও ভারতীয়র কাছে এক অভূতপূর্ব সম্মান। ডিক্সন স্কলারশিপ তাকে 1 লক্ষ টাকার পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এমনকী জেনেভা ও নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্র সঙ্ঘের সম্মেলনে নেত্রাকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

নেত্রার বাবা রাষ্ট্র সঙ্ঘকে যা বলেছেন

সি মোহনদাস জানান- ” তাঁর মেয়ের শিক্ষার জন্য 2013 সালে তিনি সঞ্চয় শুরু করেছিলেন।আমাদের অভিজ্ঞতাগুলি আমাদের শিখিয়েছে যে অর্থ জীবনের একটি অঙ্গ এবং প্রকৃতির স্থায়ী। যেহেতু আমাদের কিছু অর্থ সাশ্রয় হয়েছিল, তাই আমরা তা দরিদ্রদের হাতে তুলে দিয়েছি।”

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তার সেলুন চালু হওয়ায় ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে, সেকথাও তিনি জানিয়েছেন। “আমাদের লক্ষ্য অন্যান্য অঞ্চলে আরও বেশি লোককে সহায়তা করা,” তিনি একথাও যোগ করেন।মেয়ের জন্য তিনি আজ গর্বিত সেকথাও জানাতে ভোলেননি তিনি। ছবিঃ এএনআই ও দ্য হিন্দু

Published on: জুন ৫, ২০২০ @ ২১:৫৯


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 2