ঢাকা আর কলকাতায় থাকার স্মৃতিচারণ অভিনেত্রী জয়া আহসানেরঃ জানালেন ঈদে তাঁর পরিকল্পনার কথাও

দেশ বাংলাদেশ বিনোদন
শেয়ার করুন

Published on: আগ ২১, ২০১৮ @ ১০:১৩

ঢাকায় নিজের বাসায় সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান

এসপিটি, ঢাকা: ১৯ আগস্ট: কলকাতার সিনেপাড়া এখন বাংলাদেশি অভিনেত্রী জয়া আহসানকে নিয়ে মাতোয়ারা। কাজের জন্য প্রায়ই কলকাতায় থাকতে হয় তাঁকে। ঈদের ক্ষণে জয়া মেলে ধরেছেন তাঁর কলকাতাবাসের গল্প কলকাতার রাস্তায়, কলকাতার রিকশায়, কলকাতার রাস্তায়, কলকাতার রিকশায় ভরদুপুর।

দক্ষিণ কলকাতার চারতলার ফ্ল্যাটের বড়সড় জানালায় বসে আছে একদঙ্গল কাক। জানালার পাশে রাখা পাত্র থেকে সুড়সুড় করে জল পান করছে তারা। কাঠফাটা গনগনে গরমে সবার যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তৃষ্ণার্ত বায়স দল তখন তাদের জন্য রাখা পাত্র থেকে জল পান করে ঠান্ডা হবে, এ আর এমন কী! কেন না কাকগুলো এতক্ষণে বুঝে গেছে, এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় এসেছেন। তাই জানালার পাশে থাকা জলের পাত্রে ওদের জন্য নিয়মিতই থাকছে জল। ভাবছেন, এটা কোনো ছোটগল্পের বর্ণনা? মোটেই নয়। বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসানের দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাটে গরমকালে হামেশায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। ওই শহরে তাঁর ফ্ল্যাটের জানালাজুড়ে কাকদের জন্য ছোট কয়েকটি পাত্র রেখেছেন তিনি।

কেন?

‘কাকেরা এসে জল খায়, আমার খুব ভালো লাগে। ঢাকার বাসার ছাদে আমি যেমন বাগান করি, ওখানে তেমনি এটা আমার শখ। কলকাতায় আমার ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে জলের ট্যাংক দেখা যায়, আশির দশকে ঢাকায় যেমন দেখতাম। ওখানে আমি যেখানে থাকি, চারপাশে প্রচুর গাছপালা—সবুজ আর সবুজ, অনেকটা আমার দেখা আশির দশকের ঢাকার মতো।’ এপার-ওপার দুই বাংলার অভিনয়শিল্পী জয়া আহসানের ঢাকার বাসায় বসে কথা হচ্ছিল তাঁর ‘কলিকাতা-জীবন’ নিয়ে। জয়ার ঢাকা-জীবনের গল্প তো ঢের জানা। কিন্তু কলকাতার জীবন? ওখানেও শুটিং, অভিনয় তাঁর নৈমিত্তিক কাজ। তবে এর বাইরেও তো তাঁর জীবন আছে। আর সে সম্পর্কে রয়েছে মানুষজনের কৌতূহলও। সে কারণে ঈদের চাঁদ পরিপক্ব হওয়ার মুহূর্তে—২৪ আগস্ট তাঁর সঙ্গে কথা হলো সামনাসামনি।

কলকাতা কত দূর?

ঢাকার মেয়ে জয়ার কলকাতাবাস অভিনয় সূত্রে। আবর্ত, একটি বাঙালি ভূতের গপ্‌পো, রাজকাহিনি, ভালোবাসার শহর, ঈগলের চোখ, বিসর্জন প্রভৃতি ছবির মধ্য দিয়ে টালিগঞ্জেও অবস্থান বেশ পোক্ত করেছেন তিনি। সামনেই মুক্তি পাবে আমি জয় চ্যাটার্জি ছবিটি। এরই মধ্যে কলকাতায় পেয়েছেন ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ইস্ট’ ও ‘সেরা বাঙালি’ পুরস্কার। এখন ঢাকা-কলকাতা করেই দিন কাটছে তাঁর।

তবে প্রথম কবে কলকাতা এসেছিলেন?

কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সূতানটি—এই তিন এলাকা নিয়ে একদা জব চার্নক সাহেব পত্তন করেছিলেন যে নগরের, সেই নগরকে কীভাবে চিনেছেন তিনি?কলকাতায় নানারূপে জয়া আহসান—কখনো আড্ডায়, শুধু ঘোরাঘুরিতে, কখনো কাজের জায়গায়কলকাতায় নানারূপে জয়া আহসান—কখনো আড্ডায়, শুধু ঘোরাঘুরিতে, কখনো কাজের জায়গায় ‘কলকাতাকে চিনেছি সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশের বই পড়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটবেলায় এখানে এসেছি বটে, তারপর বড় হয়ে যখন এলাম, কফি হাউসে গেলাম। দেখি, মান্না দের গান শুনে যেভাবে কল্পনা করেছিলাম, এ তো তেমনই।’ কলকাতায়ও তাঁর সঙ্গে সেঁটে আছে ‘সেলিব্রেটি ইমেজ’। আগে অতটা না হলেও ভক্তদের জটলা এখন নিয়মিতই সামলাতে হয় তাঁকে। ‘অবস্থাটা এমন ছিল না, ২০১৫-এর পর থেকে বদলেছে সব। শুটিং না থাকলে আগে নন্দনে গিয়ে শিশির মঞ্চে নিয়মিত থিয়েটার দেখতাম, হলে সিনেমা দেখতাম, আর দিতাম ধুন্ধুমার আড্ডা। নন্দনে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা, আপনার মনে হবে আপনি সিনেমা হলের স্ক্রিনের ভেতরে ঢুকে গেছেন!’ স্মৃতির মধ্যে বাঁচি জয়া আমাদের সামনে বসা। কিন্তু তাঁর স্মৃতি কলকাতার গলি-তস্যগলি চষে বেড়াচ্ছে। আলাপের শুরুতে বলেছিলেন, ‘আমি স্মৃতির মধ্যে বাঁচি, কলকাতায় এলে ঢাকার স্মৃতি মনে পড়ে, ঢাকায় থাকলে কলকাতার…।’
তাই একে একে এখন তাঁর মনে আসছে একাকী ট্রামে চড়ার স্মৃতি। সঙ্গে এ-ও জানালেন, ‘জীবনানন্দ দাশকে মনে করেই ট্রামে উঠেছিলাম কিন্তু।’ তবে কেবল ট্রাম নয়, দক্ষিণ কলকাতায় পাড়াভিত্তিক যেসব রিকশা চলে, মন চাইলে তাতে বেশ আয়েশ করে চেপে বসেন।

আর কী করেন?

উত্তরে বললেন, ‘যেখানে আমি থাকি, তার পাশে সন্ধ্যা বাজার নামে একটি বাজার আছে। এখানে গিয়ে তাজা মাছ আর সবজি কিনি।’ অপর্ণা সেনের সঙ্গে বছর দুই আগে দুর্গাপূজার সময় একবার সাধারণ মানুষের সঙ্গে হেঁটেছিলেন বিস্তর। বললেন সেই ঘটনা, ‘পুজোর সময় পুরো কলকাতায় ভয়াবহ যানজট হয়। এ সময় গোলপার্ক থেকে যোধপুর অবধি হেঁটে এসেছিলাম—আমার চারদিকে মানুষের স্রোত, সে এক অন্য রকম কাণ্ড।’ কলকাতায় কোনো কোনো দিন সকালের খাবার ফুটপাতেই সেরে নেন জয়া! অবাক হচ্ছেন? তাঁর মুখ থেকে শুনুন, ‘ওখানে “চিনা ব্রেকফাস্ট” নামে একধরনের খাবার পাওয়া যায়। কলকাতার ফুটপাতে চিনের কেউ কেউ অস্থায়ী এ দোকান চালান। সকালে দোকান বসে খাবার শেষ হওয়ার পরেই হাওয়া।’ কথায় কথায় নতুন একটি তথ্য দিলেন জয়া, ‘কলকাতায় এসে আমি মিষ্টি খেতে শিখেছি। এখানকার বলরাম মল্লিকের আতার পায়েস, বেক রসগোল্লা, নলেন গুড়ের তালের শাঁস, ঘিয়ে বানানো মতিচূরের লাড্ডু…আহ!’ ‘আহ’ শব্দটি বললেন এমনভাবে, যেন এখনো মুখে লেগে আছে স্বাদ।

বন্ধুত্বের বয়স বাড়ে না কলকাতায় এই বাংলাদেশি অভিনেত্রীর সঙ্গী তাঁর মা। সেখানে আরও আছে নানা বয়সের বন্ধু—অভিনয় জগতের অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, সোহিনী সরকার, প্রিয়াংকা সরকার, সায়নী ঘোষ, অঙ্কিতা চক্রবর্তী যেমন তাঁর বন্ধু, তেমনি বন্ধুত্ব কবি শ্রীজাতের সঙ্গেও। বন্ধুবান্ধব মিলে মাঝেমধ্যেই উড়াল দেন, ‘ছৌ নৃত্য দেখতে কিছুদিন আগে পুরুলিয়ায় গিয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, অবসর পেলে আড্ডা জমিয়ে বসি আমরা, এ-ওর বাড়িতে চিল করি, খাওয়াদাওয়া হয়; কখনো আবার যাই ঘুরতে। একবার যেমন সুন্দরবন (কলকাতা অংশ) গিয়েছিলাম। সুন্দরবনে নদীর মধ্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, লঞ্চের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ বসে আমরা—সেই অনুভূতি বোঝানো যাবে না। ওখানে মুন নামে আমার আরেক বন্ধু আছে। ওর মা, মানে আমার মাসিমা প্রায়ই আমার জন্য নানান খাবার রান্না করে পাঠান। আমার কলকাতাজীবনে এসবের অবদান অনেক।’

জয়ার বন্ধুত্ব সায়নী ঘোষের সঙ্গে

জয়ার বন্ধুত্বের টানে মাস পাঁচেক আগে ব্যক্তিগত সফরে ঢাকায় এসেছিলেন কলকাতার অভিনেত্রী সোহিনী সরকার। তাঁকে নিয়ে জয়া গিয়েছিলেন বিক্রমপুর আর পুরনো ঢাকায়। ‘জানেন, আমাদের শহীদ মিনার, একুশের ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা—এগুলো নিয়ে কলকাতার বন্ধুদের খুব কৌতূহল। এই উপলক্ষগুলোতে ঢাকায় আসতে চায়, থাকতে চায় ওরা।’

আমদানি-রফতানি

কথার ফাঁকে জানা গেল এই তারকার ‘আমদানি-রফতানি’ সম্বন্ধে। না, খুব জটিল কিছু নয়। ওপারের বন্ধুদের জন্য ঢাকা থেকে প্রায়ই তিনি যে নানা পদের মাংস, শুঁটকি, ভর্তা আর কাচ্চি নিয়ে যান, তাঁর ভাষায় এগুলো হলো ‘রপ্তানি’। আর ‘আমদানি’ হলো কলকাতা থেকে তিনি যেসব পছন্দের খাবার ঢাকায় আনেন—পাতিলেবু ও লাল চালের মুড়ি। অতঃপর শিকড়ে কাজের জন্য কলকাতায় থাকলেও তাঁর মনে ঢাকা সব সময় ছবির মতো আঁকা। শেষ বেলায় জয়ার মুখে তাই শোনা গেল ঢাকা-কীর্তন, ‘ঢাকাই আমার শিকড়। এই দেশ, দেশের মানুষ আমাকে তৈরি করেছে। শিকড় ছাড়া গাছ যেমন বাঁচতে পারে না, তেমনি বাংলাদেশ ছাড়া আমিও। এ দেশই আমার সব।’

টালিউড তারকাদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে। ছবি: জয়ার অ্যালবাম থেকে

জয়ার ঈদ

ঢাকায় বিদেশ-বিভুঁই যেখানেই থাকুন না কেন, ঈদ সব সময় বাংলাদেশে, আরও নির্দিষ্টভাবে বললে ঢাকায় পরিবারের সঙ্গেই ঈদ করতে চান জয়া আহসান। তাই বরাবরের মতো এই ঈদেও থাকবেন ঢাকায়, পরিবারের সঙ্গে।

ঈদের দিনের পরিকল্পনা কী?

জয়া বললেন, ‘না, বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। অন্যান্যবার যা করি, এবারও তাই করব। ঈদের সকালে নিজের পছন্দের দুই-এক পদ রান্না করব, বাসায় অতিথি এলে তাদের আপ্যায়ন করব। এরপর মামা-খালাদের বাসায় বেড়াতে যাব।’ ঈদের ছুটিতে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা জমাবেন একদিন, তাঁর পরিকল্পনায় এটিও আছে। জয়ার নানি যখন বেঁচে ছিলেন, সে সময় নানির সঙ্গে দেখা করার মধ্য দিয়েই শুরু হতো তাঁর দিন। তিনি জানালেন, ‘ছোটবেলায় ঈদের দিন সকালবেলা নানির বাসায় যাওয়া, বড়দের কাছ থেকে সালামি নেওয়া, এসবের মজাই ছিল আলাদা!’

ছবি: গুগল ও জয়ার অ্যালবাম থেকে

Published on: আগ ২১, ২০১৮ @ ১০:১৩

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 3