বিশ্ব ডিম দিবস : ডিম উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থানে, পরিসংখ্যান দিলেন মন্ত্রী

Main অর্থ ও বাণিজ্য দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

কলকাতায় সাড়ম্বরে উদযাপিত হল বিশ্ব ডিম দিবস
ডিম উৎপাদনের গ্রোথ রেটে আমরা সারা দেশের মধ্যে এগিয়ে আছি। জাতীয় পর্যায়ের রেট যেখানে ৮% সেখানে আমাদের রাজ্যের রেট ১৮%।- মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ

Published on: অক্টো ১০, ২০২৫ at ২৩:২৬

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১০ অক্টোবর :  আজ কলকাতায় সাড়ম্বরে উদযাপিত হল বিশ্ব ডিম দিবস। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। ডিম উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি জানিয়ে দেন সাম্প্রতিক পরিসংখ্যা অনুযায়ী আমাদের রাজ্য ডিম উৎপাদনে প্রথম স্থানে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মাইতি জানান যে একন বাঙালি হিসাবে আমাদের রাজ্যের সাফল্য বিশেষ করে প্রথম স্থান অর্জন করা খুবই আনন্দের ও গর্বের বিষয়।

এদিনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নীলোৎপল ঘোষ, রেজিস্তার পার্থ বসু, প্রফেসার বরুণ রায়, পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মাইতি, ন্যাশনাল এগ কো-অর্ডিনেশন কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সনৎ সরকার। ছিলেন রাধেশ্যাম রায়, পলাশ দে সহ আরও অনেকে।

এদিন পথচলতি মানুষের হাতে দুটো করে ডিম উপহার দিয়ে ডিম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সহ বিশিষ্ট অতিথিরা ডিম তুলে দেন তাদের হাতে। এরপর রঙ্গিন বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এরপর এক আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বিশিষ্ট অতিথিরা সকলেই তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তার আগে প্রদীপ জ্বলাইয়ে এবং অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্বর্ধিত করা হয়।

এদিন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ রাজ্যে প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগের সাফল্যের বিষয়ে অবগত করেন। সেই মত তিনি কিছু উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন- “আজ বিশ্ব ডিম দিবসে রাজ্য সরকার সাফলতা সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চাই। গ্রোথ রেটে আমরা সারা দেশের মধ্যে এগিয়ে আছি। জাতীয় পর্যায়ের রেট যেখানে ৮% সেখানে আমাদের রাজ্যের রেট ১৮%। আমাদের বাৎসরিক ডিমের পরিমাণ হল ১,৫২৮ কোটি । ২৪-২৫ বর্ষে ডিম উৎপাদনের আবেদন  ১৬২৩ . ৯০ কোটি। এর মধ্যে অংগঠিত ক্ষেত্র আবেদন পাওয়া গেছে ৮৪৫ . ৫৪ লক্ষ কোটি এবং সংগঠিত ক্ষেত্র বেসরকারি উদ্যোগ ইন্টেন্সিভ  স্কিম ২০১৭ থেকে পাওয়া গেছে ৭৫২. ৮ কোটি। আর পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগ তার থেকে পাওয়া গেছে ২৬. ২৮ কোটি  মোট ১,৬২৩. ৯০ কোটি। ইন্টেনসিভ স্কিমে ২০১৭ তে আবেদন পাওয়া গেছে ১৭৩ কোটি প্রাথমিকভাবে অনুদান দেওয়া হয়েছে ১৭৩ কোটি। ১২৫টি ফার্ম উৎপাদন শুরু হয়েছে। সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছে ৭৩টি ফার্মকে। অনুদানের পরিমান ৩৩.৯০ কোটি টাকা।“

“ ডিম ও মাংস উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রাণী সম্পদ বিকাশ ২০১১ সাল থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত হাঁস-মুরগি বিলি করা হয়েছে ৯.৬৫কোটি আর ছাগল বিলি করা হয়েছে ৯ লক্ষ ২৫ হাজার ৯২৭টি । আইসিএমআর-এর তথ্য অনুযায়ী আমাদের প্রয়োজন ১৮০টি ডিম সেখানে আমরা পাচ্ছি ১৬৫টি। গ্রামীণ এলাকায় ডিমের উপযোগিতা আরও বেশি করে প্রচার করা দরকার। ডিম খাও শরীর বাঁচাও। গ্রামীণ এলাকায় ডিমের উপযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সেমিনারের আয়োজন করার পরামর্শ দিলেন মন্ত্রী। গ্রামে হাঁস-মুরগি-ছাগল দিচ্ছি কিন্তু তারা কয়েকদিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে সেটা আপনারা দেখুন (সামনে থাকা প্রাণী সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, চিকিৎসকদের বিষয়টি ভাল করে খতিয়ে দেখার পরমার্শ দেন মন্ত্রী । তিনি বলতে থাকেন- “২৮-০২ ২০২৫ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৯.৬৫ কোটি আমরা হাঁস-মুরগি বিলি করেছি । আমাদের যে হিসাব জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রধান প্রাণীজ সম্পদ মাথাপিছু লোক গ্রাম প্রতি ২৩১ । আর মাংস উৎপাদন বেড়েছে ৪০.৫২ শতাংশ। আমাদের প্রধান প্রাণীজ সামগ্রী উৎপাদন ২০২২ সালে ছিল ৬৯ .৬৯ লক্ষ মেট্রিক টন, সেখনে ২৪-২৫ এ এসে দাঁড়িয়েছে ৮৪.২৫ লক্ষ মেট্রিক টন। ডিম উৎপাদনে ২০২২ সালে  ১৩৭৫ বিলিয়ন সেটা ২৪-২৫ এ এসে দাঁড়িয়েছে ১৫৩৩.৫ বিলিয়ন। মাংস উৎপাদনে ২২ এ ছিল ১১.৬৬ লক্ষ মেট্রিক টন সেটা ২৪-২৫  দাঁড়িয়েছে ১৪.৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন। প্রাণী সম্পদের উন্নয়নে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রাণী সম্পদ বিকাশ নিগম। আনুমানিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে নদিয়া জেলার হরিণঘাটায় পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী, মালদা জেলার ইংলিশ বাজার ।  পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ৭৬৫টি হরিণঘাটার মাংস বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে । অতি সম্প্রতি হরিণঘাটা আউটলেটের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত মাছও বিক্রি করা হচ্ছে।“

পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মাইতি বলেন- “ওয়ার্ল্ড এগ ডে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় প্রথম চালু হয়। এর আগে এই দিনটি দুর্গাপুজোর মধ্যে পড়ে যাওয়ায় দিনটি উদযাপনে একটু সমস্যা হয়েছে। ভিয়েনা যেমন এগ ডে পালন করেছে প্রথম। ঠিক তেমনই আমরা ভারত চিকেন ডে পালন করছি। গত পাঁচ বছর ধরে। এবছর ছ’বছর হবে। সাত বছর হলে সেটি নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব চিকেন ডে হিসাবে স্বীকৃতি পাবে।ভিয়েনা যেমন ওয়ার্ল্ড এগ ডে’র কৃতিত্ব পেয়েছে ঠিক তেমনই আমাদের ভারত একইভাবে ওয়ার্ল্ড চিকেন ডে’র কৃতিত্ব পাবে। ইতিমধ্যে আমরা জাতীয় পর্যায়ে কাজকর্ম শুরু দিয়েছি।“

“আপনারা জানেন পশ্চিমবঙ্গ ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভর। সারা ভারতের যা গ্রোথ রেট তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি রয়েছে আমাদের রাজ্যে। এটি সমবব হয়েছে আমাদের স্কলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং মাননীয় মন্ত্রী  স্বপন দেবনাথ  এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায়। কয়েকদন আগেও আমরা বলেছিলাম সানডে অর মান্ডে রোজ খাও এক আন্ডে আর এখন বলছি সানডে অর মানডে রোজ খাও দো-আন্ডে। সারা বিশ্বের লোক বুঝতে পেরেছে ডিম খাওয়া জরুরি। ডিম উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থানে আছে। সারা ভারতের মধ্যে বাঙালি হিসাবে আমাদের কাছে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।“ যোগ করেন মদন মাইতি।

অধ্যাপক বরুণ রায় বলেন- “দেহের যত ওজন ঠিক ততটাই প্রোটিন আপনার দরকার। আপনার ওজন যদি ৯০ কেজি হয় তাহলে আপনার ৯০ গ্রাম প্রোটিন দরকার প্রতিদিন। এটা আমাদের দেশের বিজ্ঞান অনুযায়ী। কিন্তু বিদেশের ক্ষেত্রে এ্টা ৬০ থেকে ৬৫ গ্রামের কম একেবারেই হওয়া চলবে না। এবার আপনি যদি হিসাব করেন যে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যে প্রোটিন আছে তার মধ্যে যথার্থ প্রোটিন আছে কিনা আমি নিশ্চিত যে নেই। আর সেটা কখনোই ওই জায়গায় পৌঁছয় না। সুতরাং আমাদের যে শরীরের গঠন তৈরি হয়েছে তা কিন্তু পর্যাপ্ত প্রোটিন দিয়ে হয়নি। এই জায়গায় ডিমের সবচেয়ে বড় ভূমিকা আছে। ডিমের কন্ট্রিবিউশন সবচাইতে বেশি। ডিমে সাড় ছ’গ্রাম মতো প্রোটিন পাওয়া যাচ্ছে , শুধু তাই নয় সবচেয়ে সহজলভ্য প্রোটিন। একটা ডিমের ওজন যদি কমপক্ষে ৫০ গ্রামও হয় তাতে ২০টি ডিমে যদি এক কেজি হয় ১৩০টাকা কেজি হলে আপনি ২০টি ডিম পাচ্ছেন। আর এতগুলি ডিওমের প্রোটিন আপনি কোনও জায়গায় কিনতে পারবে না। একমাত্র ডিম যার প্রভাব হল ৮৮%। মানে যা খাচ্ছেন তার ৮৮ ভাগ হজম হচ্ছে। সুতরাং সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ডিমের চাহিদা ক্রমেই বাড়বে। ভেজিটেরিয়ান আর নন-ভেজিটেরিয়ান। ভেজটারিয়ানদের মধ্যে আংশিক ডিমকে পছন্দ করে বাকিরা করে না। সুতরাং একশো দিম্নের সরকারে যদি আমিষাশীদের মধ্যে বিচার করে তাহলে তা পৌঁছে যাবে ১৫৬। সুতরাং ভারতবর্ষ কিন্তু ডিম উৎপাদনে খুব একটা পিছিয়ে নেই। এই প্রোটিনের চাহিদা যখন বাড়বে ।“

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণীসম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নীলোৎপল ঘোষ বলেন- “আমাদের ১৯৫০ সালে মাথাপিছু ডিমের জোগান ছিল বাৎসরিক পাঁচ টা। সেই সংখ্যাটা আজ এসে দাঁড়িয়েছে ১০৩। গত ৭৫ বছরে পাঁচ থেকে ১০৩ করতে পেরেছি তা খুবই ভাল। আজ বিশ্বে ভারত ডিম উৎপাদনে দ্বিতীয় । এবার আমাদের লক্ষ্য থাকবে এক নম্বরে আসার। বিশ্বে যত ডিম উৎপাদন তার মধ্যে ৮.২% হয় আমাদের ভারতে। আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রে এটা আরও উল্লেখযোগ্য যে যেখানে সারা দেশের ক্ষেত্রে বছরে একনএর ১০৩টি ডিম লাগে সেটা আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রে ১৬৪ । সুতরাং ভারতবর্ষের যে জন প্রতি আয় তার থেকে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি।“

Published on: অক্টো ১০, ২০২৫ at ২৩:২৬


শেয়ার করুন