বিয়ে করতে বিদেশে কেন- প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া টাফি’র, রাখল অনুরোধও

Main দেশ বিদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৮ নভেম্বর: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘মন কি বাত’এ প্রশ্ন তুলেছেন- “বিয়ে করতে বিদেশে কেন যান ভারতীয়রা?” এই বিষয়টা উত্থাপন করে তিনি তাঁর মনের যন্ত্রণার কথা প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন। বলেছেন-বিদেশে না গিয়ে বিয়ের আয়োজন যদি ভারতের মাটিতেই করা হয় তাহলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।এক্ষেত্রে তিনি ‘ভোকাল ফর লোকাল’এর কথাও বলেছেন। ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি’র ন্যাশনাল কমিটির সদস্য অনিল পাঞ্জাবি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রেখেছেন- এই প্রবণতা কমাতে আপনাকে কয়েকটি দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য অর্থনৈতিক শিথিলতা লাঘু করতে হবে।”

এই মরসুমে প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন- ইদানিং কিছু পরিবারের বিদেশে গিয়ে বিয়ে করার নতুন প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তারা যদি দেশের মাটিতে সেই বিয়ের আয়োজন করে তাহলে দেশের টাকা দেশের মধ্যে থেকে যাবে। একই সঙ্গে দেশের লোকদেরও সেবা করার সুযোগ মিলবে। তিনি আরও বলেছেন- “ভারতীয় পণ্যের প্রতি আবেগ শুধু উৎসবের মধ্যে সীমিত থাকলেই চলবে না। বিয়ের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী সংগঠনের অনুমান, এই মরসুমে প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে। বিয়ের কেনাকাটাতেও ভারতীয় পণ্যের উপর জোর দিতে হবে। এটা অনেক বড় মাপের পরিবারের সঙ্গে জড়িত বিষয়।এই যন্ত্রণার কথা আপনাদের ছাড়া আর কাদের বলব।”

জিএসটি কমানো দরকার- অনিল পাঞ্জাবি

টাফি’র ন্যাশনাল কমিটির মেম্বার অনিল পাঞ্জাবি এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করেছেন।বলেছেন- এটা তো খুবই ভাল বিষয়। উনি তো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। আমাদের দেশেই তো এখন বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজনের দারুন দারুন স্পট রয়েছে। সেগুলির মধ্যে বেশ কিছু রয়েছে যা সত্যিই আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু, তা সত্ত্বেও লোকে কেন এখন বিদেশে গিয়ে বিয়ে করছে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্ন সত্যিই এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে।”

“বিদেশে কারা যায় বিয়ে করতে- যাদের হাতে প্রচুর টাকা আছে। যারা অনেক অনেক টাকার মালিক। এক কথায় যারা উচ্চ শ্রেনির ধনী। আর কারা যায় – মধ্যবিত্ত শ্রেণি কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এদের বেশির ভাগই নিজেদের ‘স্ট্যাটাস’ বজায় রাখার জন্য বিদেশে যায় বিয়ে করতে। একই সঙ্গে বিদেশের “ওয়েডিং ভেন্যু” কিংবা বিবাহের স্থান তাদের কাছে খুবই মনোগ্রাহী লাগে। এসব কারণের জন্য বিদেশে অনেকেই যাচ্ছে বিয়ে করতে। তবে, দেশে এখন বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রিসর্ট কিংবা কোনও জায়গা বেছে নেওয়া হলে সেখানে একটা বড় ধরনের জিএসটি দিতে হয়।সেটা ১৮ শতাংশ –এর মতো। এছাড়াও আনুষঙ্গিক আরও অনেক খরচা দিতে হয়। সেই তুলনায় বিদেশে বিয়ের আয়োজন করলে বেশি লোককে নিমন্ত্রণ করতে হয় না। যারা যায় তারা নিজেদের পয়সায় যায়। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক কমে যায়। তাই  এই বিষয়গুলি যদি সরকার দেখে অর্থাৎ সেখানে নজর দেয় এবং দেশের ভিতরে বিবাহের স্থানগুলিতে খরচের জন্য আর্থিক ক্ষেত্র শিথিল করে তাহলে হয়তো বিদেশে গিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা কমানো সম্ভব। এজন্য অবশ্য আগে সরকারকেই বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। উদ্যোগী হতে হবে।” যোগ করেন অনিল পাঞ্জাবি।

ভারতে বিবাহের পরিবর্তনের চেহারা

ভারতে, বিবাহ ক্রমবর্ধমান ঐশ্বর্যপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে। সেই দিনগুলি চলে গেছে যখন একটি সাধারণ অনুষ্ঠান এবং অভ্যর্থনাই যথেষ্ট হবে – এখন, বর এবং কনেরা চায় তাদের বিয়ে সত্যিকারের জমকালো ব্যাপার হোক।এটি ভারতে বিবাহ শিল্পের ক্রমবর্ধমান আকারে প্রতিফলিত হয়। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতীয় বিবাহ শিল্পের মূল্য আনুমানিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। এই সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই বৃদ্ধি চালনাকারী অনেক কারণ আছে. প্রথমত, একটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি রয়েছে যেখানে আরও নিষ্পত্তিযোগ্য আয় রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিবাহগুলিকে স্ট্যাটাস সিম্বল হিসাবে দেখা হয় এবং পরিবারগুলি তাদের সম্পদ প্রদর্শন করতে আগ্রহী। তৃতীয়ত, গন্তব্য বিবাহের একটি প্রবণতা রয়েছে, যা প্রায়শই ঐতিহ্যবাহী বিবাহের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।এই বৃদ্ধির কারণ যাই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট যে ভারতে বিবাহের চেহারা বদলে যাচ্ছে। তারা আগের চেয়ে আরও বড় এবং অযৌক্তিক হয়ে উঠছে।


শেয়ার করুন