Published on: নভে ২৯, ২০২৩ at ২১:০৯
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৯ নভেম্বর: আজ কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপির প্রতিবাদ সভার মঞ্চে দাটিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করএ দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী বিজেপির অমিত শাহ। বাংলার জনতার উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- আপনারা বেশি করে ভোট দিয়ে মোদিজিকে প্রধাননমন্ত্রী করুন। একই সঙ্গে তিনি দুর্নীতির প্রশ্নে বাংলার তৃণমূল সরকার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা সমালোচনা করেন।
সভায় শুরুতে উপস্থিত দর্শকদের থেকে সেভাবে আওয়াজ না পেয়ে অমিত শাহকে বলতে শোনা যায়, আরে বাংলার মানুষের আওয়াজ কোথায় গেল! এরপরই নিজের বক্তব্য শুরু করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
শুভেন্দু প্রসঙ্গে মমতাকে দুষলেন অমিত শাহ
“২৪শে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী চাই কি চাই না? ২৬শে বাংলায় বিজেপিকে চাই কি চাই না? আরে এত কম আওয়াজে চলবে না। বাংলায় ১৮টি লোকসভা আসন ও বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন জিতিয়ে বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে এখানে পরবর্তী সরকার বিজেপি সরকার হবে। বাংলার জনতা ২ কোটি ৩০ লক্ষ ভোট বিজেপিকে দিয়েছে। ৭৭টি আসন দিয়েছে। আমাদের নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দিদি দ্বিতীয়বার বিধানসভা থেকে বরখাস্ত করেছে। আমি বলতে চাই, দিদি- কান খুলে শুনুনু, শুভেন্দুজিকে আপনি বিধানসভা থেকে বের করে দিতে পারেন কিন্তু বাংলার জনতাকে কখনও চুপ করাতে পারবেন না। বাংলার জনতা বলছে, দিদি আপনার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে।”
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে কড়া মন্তব্য
“সোনার বাংলা আর মা-মাটি-মানুষ এর স্লোগান তুলে কম্যিউনিস্টদের হটিয়ে দিদি ক্ষমতায় আসেন। জনগণের দিকে আঙুল তুলে অমিত শাহ জানতে চান- এখানে পরিবর্তন হয়েছে কি? অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়েছে কি? তোষণ কি বন্ধ হয়েছে? রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হয়েছে কি? দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে কি? মোদিজি লাখ লাখ টাকা বাংলাকে দেয়। তৃণমূলের সিন্ডিকেট সেই টাকা বাংলার গরিব মানুষের কাছে সেই টাকা পৌঁছতে দেয় না।”
“আজ আপনাদের কাছে আমি আবেদন জানাতে চাই যে ২০২৬ সালে এখানে বিজেপি-র সরকার যদি বানাতে চান তাহলে এর ভিত ২০২৪ সাল্বের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে মোদিজিকে বাংলা থেকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে।”
“লালা ভাই(লাল পার্টি) আর তৃণমূল কংগ্রেস মিলে বাংলাকে শেষ করে দিয়েছে। নির্বাচনী হিংসা সবেচেয়ে বেশি এই বাংলাতেই হয়ে থাকে। অনুপ্রবেশ বাংলার সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধ করতে পারেনি। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রবেশ নিয়ে লোকসভা চলতে দিতেন না সেই মমতা বন্দ্যোপাধায় আজ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বিলি করছে।চুপ করে আছেন।”
“গোটা বাংলা আজ হয়রান।যে বাংলায় সকাল সকাল রবীন্দ্রসংগীত শোনা যেত সেই বাংলা আজ বোমাবাজির শব্দে সরগরম হয়ে থাকে। গোটা দেশে গরিবি হটে গেলেও বাংলায় আজও রয়ে গিয়েছে। দুর্নীতি চরম সীমায় পৌঁছেছে।” যোগ করেন অমিত শাহ।
তিন বলেন- “আপনাদের একটা কথা বলতে চাই, আমি গুজরাত থেকে এসেছি। আমার জীবনে কোনও নেতার ঘর থেকে এত গাদা গাদা নোটের পাহার কোনওদিন দেখিনি।
“যে বাংলা সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা, স্বাধীনতার আন্দোলন, অধ্যাত্ম, উদ্যোগে গোটা দেশে নেতৃত্ব দিত সেই বাংলাকে সবচেয়ে পিছনে ঠেলে দেওয়ার কাজ দিদি করছে। দিদি বাংলাকে শেষ করে দিয়েছে।”
অযোধায় রামমন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গে
“আমি বাংলার জনতাকে বলব, একবার গোটা দেশে উন্নয়ন দেখুন। মোদিজি ৬০ কোটির জীবনকে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। গোটা দেশে আতংকবাদকে মোদিজি সমাপ্ত করেছে। যে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের জন্য বাঙ্গাল্র সুপুত্র ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলিদান দিয়েছিল সেই ৩৭০ ধারাকে মোদিজি সমাপ্ত করে দিয়েছে। চন্দ্রযানে ভারতের তেরঙ্গাকে পৌঁছনোর কাজ নরেন্দ্র মোদি করেছেন। দেশের অর্থব্যবস্থাকে ১১ থেকে পাঁচ নম্বরে নিয়ে আসার কাজ করেছেন মোদিজি।”
“আমি বাংলাবাসীর কাছে জানতে চাই, অযোধায় রামমন্দির গড়ে তোলা উচিত কিনা।কংগ্রেস আর মমতা বন্দ্যোপ্পাধ্যায় এতে বাধা দিয়েছে। মোদিজি ২০১৯ সালে ভূমিপুজো করেছেন। ২২ জানুয়ারি ২০২৪ সালে মোদিজি এসেখানে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন।”
অমিত শাহের মুখে জ্যোতিপ্রিয়, পার্থ, অনুব্রতের নাম
“এখানে ২১২জন বিজেপি কর্মী মৃত্যু হয়েছে। দিদিকে বলতে চাই, আমাদের কার্যকর্তা ভাই-এর চেয়েও বড়। গোটা দেশে এবং এই বাংলায় এক একজন কার্যকর্তা এর বদলা নেওয়ার জন্য তৈরি আছে। ২০২৬ সালে নির্বাচনের সময় বুঝতে পারবেন কিভাবে রাজনৈতিক খুনের ঘটনা কিভাবে ভোটের মাধ্যমে বদলা নেওয়া যায়।”
বাংলাকে দুর্নীতির জন্য বদনাম করার কাজ করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। জ্যোতিপ্রিয় মন্ডল, অনুব্রত মন্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় তা সে গরু চুরি হোক, কয়লা চুরি হোক, ভর্তি কেচ্ছা হোক, মানে সব কিছুতেই বাংলার জনতাকে এরা খেয়েছে।
আজ আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলে যেতে চাই, যদি আপনার সাহস থাকে তাহলে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনুব্রত মন্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যাওকে সাসপেন্ড করে দেখান।
বাংলাদেদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গে মমতা সরকারকে দুষলেন
বাংলাদেদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গে মমতা সরকারকে দুষলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন- “এই পার্টি বাঙ্গালার ভালো করতে পারে কি? আসামে দেখুন কিভাবে চলছে। আর বাংলায় দেখুন, সেখানে কি হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে- অনুপ্রবেশকারীদের বলা হচ্ছে- আপনাদের যদি ভোটার কার্ড, আধার কার্ড লাগে তাহলে এই নম্বরে যোগাযোগ করুন। বাংলার পুলিশ চুপ। আপনারাই বলুন যে রাজ্যে এত অনুপ্রবেশ হয় সেখানে কোনও উন্নয়ন কি হতে পারে? এজন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-র বিরোধ করছেন। আজ এই সভায় বলে যেতে চাই যে মমতা দিদি সিএএ দেশের আইন। একে কেউ আটকাতে পারবে না। একে আমরা লাঘু করে ছাড়ব।যারা ওই দেশ থেকে এসেছে তারা হিন্দু ভাইবোন আমাদের। আমাদের যেমন এদেশে থাকার অধিকার আছে ঠিক তেমন তাদেরও অধিকার আছে।”
নথি বের করে টাকার হিসাব দিলেন অমিত শাহ
অমিত শাহ এদিন বলেন- “দিদি, যে সরকারে আপনি মন্ত্রী ছিলেন ইউপিএ সরকার যে সরকারকে আপনি সমর্থন করেছেন তারা ২০০৪-২০১৪ সালে বাংলাকে মাত্র ২ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছিল। আর মোদিজি গত ৯ বছরে ৬ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। ন্যাশনাল হাইওয়ে প্রকল্পে মোট ৭০ হাজার কোটি টাকা, রেলওয়েতে ১৬ হাজার কোটি টাকা, বন্দরগাও তে এক হাজার কোটি টাকা , সব মিলিয়ে আপনার দু’লক্ষ কোটি টাকার সামনে বিজেপি সরকার আপনাদের আট লাখ টাকারও বেশি দেওয়ার কাজ করেছে।”
সোনার বাংলা দিতে পারে শুধু মোদিজি-অমিত শাহ
লোকসভার ভোট প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে অমিত শাহ বলেন- “ঘরের ভোটে তো আপনি র্যাগিং করে জিতে গিয়েছেন। তবুও তো ৭৭টি আসনে জিতেছে বিজেপি। কোথাও ছিল শূন্য আর কোথায় ৭৭। আর এবার আজকের র্যালি দেখে আমি স্পষ্ট বলতে চাই যে ২০২৬ সালের নির্বাচনে দু-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। তবে এর আগে ২০২৪ সালের নির্বাচন আছে। আপনারা ২০১৯ সালে ১৮টি আসন দিয়েছিলেন। আপনারা এবার এমন ভোট দিন যাতে মোদিজি শপথ নেওয়ার সময় বলতে পারেন যে আমি বাংলার জন্যই এভাবে আজ প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছি।”
বাংলার ভাল করতে এই দুর্নীতিবাজ পরিবার তৃণমূল সরকার পারবে না। বাংলার ভাল কম্যিউনিস্টরাও পারবে না। আর কংগ্রেস পার্টি তো তৃণমূলের স্মরণে চলে গিয়েছে। বাংলাকে সোনার বাংলা বানানোর কাজ শুধুমাত্র মোদিজির নেতৃত্বে বিজেপি করতে পারে।
সরব শুভেন্দু
এর আগে বিধানভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন- আমার গলা ভেঙ্গে গেছে। বিধানসভা থেকে তাড়িয়েছে আমাকে। আমি আপনাদের মাধ্যমে বলছি, লোকসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীকে সাসপেন্ড করবেন তো? এরপর ‘চোর ধরো’ স্লোগানে সরব হন শুভেন্দু অধিকারী।
তৃণমূল যে ওষুধ বোঝে আমরা সেই ওষুধই দেব-সুকান্ত মজুমদার
এরপর রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন- অমিত শাহ এখানে উপস্থিত আছেন- এই আওয়াজে হবে না। নবান্নের ১৪ তলা পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছনো দরকার। ২৪ শে আমরা মিটিয়ে দেব খেলা ২৬শে মিটে যাবে তৃণমূলের মেলা।আজ আমাদের কার্যকর্তারা বহু বাধা কাটিয়ে এখানে এসেছেন। তৃণমূল যে ওষুধ বোঝে আমরা সেই ওষুধই দেব।
Published on: নভে ২৯, ২০২৩ at ২১:০৯