Published on: ফেব্রু ১১, ২০২৪ at ২১:৫৬
Repoter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১১ ফেব্রুয়ারি: সম্প্রতি অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি আয়োজন করেছিল তাদের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাশ সত্যার্থী। সফল ছাত্র -ছাত্রীদের হাতে তুলে দেন সমাবর্তনের শংসাপত্র । তার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে এক মূল্যবান ভাষণ দেন। আর তখন তিনি নিজের জীবনের কথা শেয়ার করেন। একই সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন – জীবনের সফলতার দিন তোমাদের জীবনে যাদের অবদান আছে তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। জীবনের প্রথম শিক্ষককে ভুলে যেও না, তা সে মা হতে পারে, বাবা হতে পারে, তোমার প্রাথমিক বিদ্যালয় বা নার্সারি স্কুলের শিক্ষক হতে পারেন যিনি তোমাকে বর্ণমালা শিখিয়েছেন। যিনি তোমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মনে রেখো, তাদের কারণেই তুমি আজ এখানে।
আজ তোমার হাতে ডিগ্রি, মেডেল রয়েছে…
নোবেল জয়ী বলে চলেন- তোমরা তোমাদের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে চিন্তাশীল হতে পারো। তবে এই লোকদের ভুলে যেও না যারা তোমার জামাকাপড় পরিষ্কার করে, তোমার টয়লেট-এর স্থান পরিষ্কার করে। তোমার ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, শ্রমিক। যারা মাঠে কাজ করে, তোমার জন্য ফসল উৎপাদনের কাজ করছেন। আজ তোমার হাতে ডিগ্রি, মেডেল রয়েছে , ঠিক তেমনই এই বিশ্ববিদ্যালয় যারা গড়েছে তাদের ভুলে যেও না। মিস্ত্রি, কারিগর এদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। এটি তোমাকে লড়াকু মানুষ করে তুলবে। “
তোমার দৃঢ় প্রত্যয়, তোমার সংকল্প তোমার পরিচয়
“আজ তোমাদের এক নতুন পরিচয়ের দিন। কয়েক ঘন্টা পরে লোকেরা তোমাকে ডক্টর-পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, স্বর্ণপদক বিজয়ী, রৌপ্য পদকপ্রাপ্ত, স্নাতক বলে ডাকবে, জানবে, চিনবে। এটি তোমার নতুন পরিচয়। তোমার অদম্য শ্রবণ কাজের মাধ্যমে এটি তোমার স্কুলে তোমার প্রথম পরিচয়- তোমার দৃঢ় প্রত্যয়, তোমার সংকল্প। অন্যদের দ্বারা আরোপিত সমস্ত কিছুর বন্ধন অনুভব করো। হিন্দু বা মুসলমানের পরিচয় তুমি অর্জন করোনি, ভারতীয় বা পাকিস্তানি হয়েও ইতিহাসে দায়বদ্ধতা অর্জন করোনি। কারও কন্যা বা পুত্র হতে পারো। কোনো ধনী ব্যক্তি বা কোনো গরীব থাকতে পারো। এটি তোমার পরিচয় নয়। আজ তুমি ফিরে এলে নতুন পরিচয়ে। “ এই কথা বলে কৈলাশ সত্যার্থী এক গল্প শোনান। যেখানে তিনি প্রাচীন উপনিষদ, বেদের গল্প স্মরণ করেন।
তুমি কে?
জঙ্গলে একজন গুরু থাকতেন , যিনি একজন ঋষি। এলাকার রাজা তার ছেলে রাজপুত্রকে সেই গুরুর আশ্রমে পড়াশুনোর জন্য যেতে বলেন। রাজপুত্র ভাবলো যে, আমার বাবা ঠাট্টা করছে। তাই সে বাবাকে বলে যে তিনি তো রাজপ্রাসাদে রেখেই তাকে পড়াশুনো করাতে পারেন, এখানে আসার কি দরকার আছে! বাবা বললেন না, তোমাকে যেতেই হবে। তাই অবশেষে রাজপুত্র জঙ্গলের গুরুকুলে যান। রাজ আভিজাত্য ঘোড়া, হাতি ছেড়ে যখন সে ছোট কুঁড়েঘরে এসে পৌঁছন তখন ভেতর থেকে আওয়াজ এল- কে তুমি? ছেলেটি উত্তর দিল – আমি তোমার রাজ্যের রাজপুত্র। এই জবাবের পরও কিন্তু দরজা বন্ধই রইল। ছিল সম্পূর্ণ নীরবতা। মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করার পর রাজপুত্রের মনে প্রশ্ন জাগলো যে দরজা খুলছে না কেন ? অবশেষে বিরক্ত হয়ে বাবার কাছে ফিরে আসেন যুবক। পুরো ঘটনা খুলে বললেন। কিন্তু বাবা ছেলের কথা খুব একটা শুনলেন না। বাধ্য হয়ে সে আবার জঙ্গলে চলে গেল। এবারেও সে দেখলো যে দরজা খোলা নেই। দরজায় টোকা দিল। তারপর, গুরু তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কে? এবার আর রাজপুত্র কোনও জবাব দিলেন না,চুপ করে রইলেন। ঋষি আবার জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে? তখন রাজপুত্র ভদ্রভাবে উত্তর দিলেন- গুরুজী, আমি কে জানলে আমি এখানে আসতাম না। এবার দরজা খোলা ছিল। ভর্তি হলেন গুরুকুলে এবং পড়াশোনা শুরু করেন রাজপুত্র।
“কিন্তু সময়টা ছিল শিক্ষার। শেখা আর শেখা । এটা শুধু জ্ঞান অর্জন নয়। জীবনকে শেখা, শিক্ষকের জীবন থেকে শেখা, আশপাশের থেকে শেখা, তোমার চোখের জল থেকে শেখা, বন্ধুদের কাছ থেকে শেখা, শুধু জ্ঞান অর্জন নয়। তাই দীক্ষান্ত সমারোহ। কিন্তু আপনি জানেন যে আপনি কে? গুরু রাজকুমারকে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কে? রাজকুমার ফিরে যাচ্ছেন। তিনি গুরুর চরণ আস্বাদন করেন- ‘অহম ব্রহ্মশ্মি’ আমিই ব্রহ্মাণ্ড। মহাবিশ্ব আমাকে সৃষ্টি করে এবং আমিই মহাবিশ্ব। যে বিশ্বজনীন জীবনের স্রষ্টা। তিনি একজন হয়ে গেলেন, যেগুলো তার পরিচয় হয়ে ওঠে। এই পরিচয় হল দায়িত্ববোধ। “
আমার চারপাশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে শুরু আমার স্বপ্ন ও রাগ
“স্কুল জীবনের প্রথম দিন থেকেই আমার স্বপ্ন ও রাগ শুরু হয়। আমার চারপাশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রথম দিন দেখলাম যে একটি মুচি ছেলে স্কুলের গেটের বাইরে বসে জুতো পালিশ করছে। কিন্তু আমরা সবাই নতুন জুতা বহন করছি। আমি তার শূন্য চোখের দিকে তাকালাম। ক্লাস রুমে প্রবেশ করলাম। সেদিন ক্লাসে প্রথম প্রশ্ন করেছিলাম শিকক্ষকে। জানতে চেয়েছিলাম – কেন ওই শিশুটি ক্লাসরুমের বাইরে? তিনি বললেন, তুমি বসো। আজ তোমার প্রথম দিন। আমি বিশ্বাসী ছিলাম না। একই উত্তর আমার বাবা, বাবা-মা’র কাছ থেকেও পেয়েছি। কিন্তু আমি প্রতিদিন সেই শিশুটিকে দেখেছি। একদিন ছেলেটির বাবাকে দেখলাম। লোকটা হাত ধরে থাকে । তার চোখ দু’টি চকচক করছিল এবং তিনি উত্তর দিলেন -বাপুজি, শুধু বাপ, দাদা সবাই এই কাজ করে আসছে। আমরা মুচি। আমরা এই কাজ করে থাকি। বাপুজি, আপনি স্বপ্নে জন্মগ্রহণ করেন এবং স্কুলে যেতে পারেন। কিন্তু কাজ করার জন্যই আমাদের জন্ম। যে আমার জীবনের শুরু. আমার বাবা-মা, আমার শিক্ষক যাই হোক না কেন। সাধারণ মানুষ বলেছে, সত্য নাও হতে পারে, তারা সঠিক হতে পারে, তারা মানসিক প্রশংসা করতে পারে এবং চলতে পারে। তোমার নতুন বড় স্বপ্ন। আপনার পরিবর্তন মনোভাব নয়, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। সেইদিন থেকে আমার লড়াই শুরু হয়েছিল “ বলেন নোবেল শান্তি জয়ী কৈলাশ সত্যার্থী।
Published on: ফেব্রু ১১, ২০২৪ at ২১:৫৬