Reporter: Dr. Soumitra Pandit
Published on: জানু ১৬, ২০২৩ @ ১১:১৮
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৬ জানুয়ারি: “পুরানো সেই দিনের কথা সে কি ভোলা যায়” সেই না ভোলা স্মৃতিগুলো আবার রোমন্থন করার জন্য।
গত ১০ এবং ১১ জানুয়ারি ২০২৩ সালে ১৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজ বেলগাছিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রাণী চিকিৎসক তথা প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের ৫০ তম তথা স্বর্ণ জয়ন্তী পুনর্মিলন উৎসব। এই উৎসবকে নিয়ে উদ্দীপনা ছিল চরমে। সঙ্গে প্রাণী চিকিৎসক বিজ্ঞানী শিক্ষাবিদ ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত মহামিলন ঘটেছিল এই বেলগাছিয়ার তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রাঙ্গনে, মূলত প্রাণী চিকিৎসা ও প্রাণীবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীরা যারা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন এবং বর্তমানে ১৯৯৫ সালের পর পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন করেছেন, সেই সেই সকল প্রাণী চিকিৎসক দাদা ভাইদের নিয়ে মূলত এই অনুষ্ঠান।
দু’দিনের এই আনন্দ অনুষ্ঠানটি শুভ সূচনা হয় ১০ জানুয়ারি। আমাদের বয়স জ্যৈষ্ঠ দাদা প্রাণী চিকিৎসক ৯৪ বছরের চিকিৎসক ডক্টর মানবেন্দ্রনাথ পোদ্দার এর হাত দিয়ে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে । তারপর প্রথানুযায়ী উদ্বোধনী সংগীত, প্রদীপ প্রজজনন প্রজ্বলন,স্মরণিকা প্রকাশ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বর্তমানে ভারত সরকারের অধীনে চাকরিরত অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি কমিশনার ডঃ অভিজিৎ মিত্র মহাশয়।
যারা বক্তব্য রাখেন
স্বাগত ভাষণ দেন অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান ড: শিবাজী ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী ভাষণ দেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দফতরের মন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী মহাশয় তিনি পেশাগত উন্নতিতে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য প্রোগ্রাম বাংলায় প্রানী চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান এবং সর্বোপরি পেশার উন্নতি সাধনের মধ্য দিয়ে গ্রাম বাংলার উন্নতি সাধন করার জন্য আহ্বান জানান।
অধ্যাপক সুনীত কুমার মুখোপাধ্যায়: পরবর্তীতে স্বর্ণ জয়ন্তী পুনর্মিলন উৎসবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুনীত কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন যে ১৩০ বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী কলেজ যা এককথায় বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজ নামে খ্যাত অনেক প্রতিকূলতার মধ্য থেকে ও সবাই এই মহামিলন কে সার্থক করেছে তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং তিনি বলেন যে এই পেশাগত উন্নতির ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডঃ অভিজিৎ মিত্র : ভারত সরকারের ভারপ্রাপ্ত অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি কমিশনার ডঃ অভিজিৎ মিত্র বলেন যেখানে প্রায় ৬৫ শতাংশ রোগ যা মানুষের হয় তা প্রাণী বাহিত তাই ওয়ান হেলথ প্রোগ্রাম অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে তাই রাজ্যস্তরে প্যান্ডেমিক রিপেয়ার্ড প্ল্যান সেটা বরিষ্ঠ নিয়ে নিয়োগ করে তা সমাধান করতে হবে।। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে এও জানান যে পশ্চিমবঙ্গের বুকে একটাই বিশ্ববিদ্যালয়। যার উপাচার্য নিয়োগ সার্চ কমিটি দিয়ে হয় না এটা লজ্জার তাই আগামী দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে গঠনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচন খুবই প্রয়োজনীয় এবং তিনি এও জানান রাজ্যের মৎস্য এবং প্রাণীর পালনে আরও স্বাবলম্বিতার প্রয়োজন রয়েছে এবং নতুন নতুন প্রকল্প রূপায়ণের জন্য তিনি সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ডক্টর যোগীরাজ তামাং : উপস্থিত ছিলেন রাজ্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগের বর্তমান অধিকর্তা ডক্টর যোগীরাজ তামাং তিনি সবাইকে অর্থাৎ প্রাক্তন এবং বর্তমান চাকুরিরত ভাইদের অভিনন্দন এবং সবাইকে এই প্রফেশন নিয়ে আরো বেশি করে কাজ করতে হবে ও গ্রামীণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
ডক্টর ডালিম কুমার নন্দী : এই ৫০ তম পুনর্মিলন উৎসবের সভাপতি ডক্টর ডালিম কুমার নন্দী মহাশয় এই প্রাণী চিকিৎসা ও প্রাণিবিজ্ঞানের বিভিন্ন উজ্জ্বল দিকগুলো তুলে ধরেন এবং আগামী দিনে সবাইকে একসাথে পথ চলার এবং সর্বোপরি এই প্রফেশনের শুভ কামনা করেন।
ডঃ সৌরভ চন্দ্র পুনর্মিলন উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং এই অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
পরবর্তীতে এই অনুষ্ঠানের যে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা বিষয়বস্তু ছিল “চ্যালেঞ্জেস টু অ্যানিমেল রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট কিপিং ইন ভিউ দা ইনক্রিজিং নিড অফ অ্যানিম্যাল প্রডিউসড টু রিসল্ভ প্রোটিন হাংগার”। এই আলোচনা সভায় বিভিন্ন বিজ্ঞানী ছাত্র গবেষক তাদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন এবং এই আলোচনা চক্র সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।১১ জানুয়ারি অর্থাৎ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় দিনের যে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা চক্র ছিল তা মূলত “রোল অফ এন.জি.ও. ইন কন্ট্রোল এন্ড কন্টেনমেন্ট অফ রেবিস ইন অ্যানিমেলস”-প্রধান বক্তা ছিলেন ডঃ সুমিত পোদ্দার, সভাপতি অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল অফ রেবিস ইন ইন্ডিয়া।
সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল চোখে পড়ার মতো। নানান নাচ, গান, আবৃত্তি, হরবলা এবং মুখ আকর্ষণ ছিল প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা অভিনীত নাটক “পাথর”। এই নাটক এ বছরের সবথেকে উল্লেখযোগ্য এবং আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান ছিল। পেশাদারিত্ব না থাকা সত্ত্বেও যে এভাবে নাটক মঞ্চস্থ করা যায় তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এদিনের নাটক সবার মন জয় করেছিল।পরদিন অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে বর্তমান এবং প্রাক্তনী ছাত্রদের মেলবন্ধন তাদের সমবেত নৃত্য সবার মন কেড়ে নিয়েছিল।
“প্রশংসা পত্র” প্রদান
দিনের অনুষ্ঠান মূলত যে সমস্ত সহযোগী বন্ধুরাই এসেছিলেন তাদের সহযোগিতা সে সমস্ত ফার্মাসিটিক্যাল কম্পানি গুলি এবং আরো নানান ভ্রাতৃত্ব সংগঠন যাদের এই ঐকান্তিক সহযোগিতায় এত বড় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো তার জন্য এই ইউনিয়ন কমিটির সম্পাদক ডা. সুনীত কুমার মুখোপাধ্যায় সবাইকে সাধুবাদ জানান। সেই সঙ্গে সকল সহযোগী কোম্পানিগুলিকে মিল্ক কমিশনার ড: অভিজিৎ মিত্র মহাশয়ের হাত দিয়ে “অ্যাপ্রিসিয়েশন সার্টিফিকেট” বা “প্রশংসা পত্র” প্রদান করা হয়।
প্রথম দিনে প্রাক্তন এবং বর্তমান দের খেলাধুলায় প্রাক্তনদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
সবশেষে গোল্ডেন জুবিলী ইউনিয়ন অর্থাৎ স্বর্ণ জয়ন্তী পুনর্মিলন উৎসব এক কথায় অতুলনীয় অভাবনীয় সাফল্যের কান্ডারী যারা এর বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ প্রাণীর চিকিৎসক যারা দূর-দূরান্ত থেকে এই দুদিনের আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এবং সার্বিক এই প্রয়াসকে সাফল্যমন্ডিত করেছেন তাদের সবাইকে অর্গানাইজিং কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়। সেই সঙ্গে আগামী দিনে আরও সঙ্গবদ্ধ হয়ে প্রাক্তন বর্তমানের মধ্যে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে যাতে আগামী দিনে এই প্রফেশনের সার্বিক উন্নতি ঘটে সেদিকে নজর সাথে সাথে আবার আগামী দিনের পথ চলার সূচনা এই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুনীত কুমার মুখোপাধ্যায়।
তাই শেষে বলি “আবার আসিব ফিরে এই ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়…….”
মনে হচ্ছে শেষ হয়েও হইল না শেষ। আবার দেখা হবে বন্ধু, আগামী কোন এক ভোরে।।।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
লেখকঃ নিজেও একজন অধ্যাপক ও প্রাণী চিকিৎসক
Published on: জানু ১৬, ২০২৩ @ ১১:১৮