
সংবাদদাতা-অনিরুদ্ধ পাল
ছবি সৌজন্যে- জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
Published on: মার্চ ২৬, ২০১৯ @ ১৮:০১
এসপিটি নিউজ, মধ্যমগ্রাম, ২৬ মার্চঃ সামান্য একটু চিকিৎসার জন্য এদেশে গরিব মানুষকে এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াতে হয়। মুখ ফিরিয়ে নেয় অনেকেই।আর সেই গরিব মানুষকেই আবার রাজনীতির ময়দানে হাতিয়ার বানিয়ে ভোটের ফায়দা লোটার কৌশল নেয় এক শ্রেণির মানুষ। গরিবদের যন্ত্রণা থেকেই যায়। তবু তারা বেঁচে আছে সমাজে এখনও কিছু সহৃদয় মানুষ আছে বলে।আর সেইসব মানুষের জন্যই এদিন রক্ষা পেল বেড়াচাঁপার ইব্রাহিম মন্ডলের একটি চোখ।তাঁরা তুলে ধরলেন সমাজের এই মানবিক রূপ।
যন্ত্রণাক্লিষ্ট ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর চোখ বাঁচানোর লড়াই চালালেন জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
১) ‘তেলা মাথায় তেল দিতে সবাই পারে’- কিন্তু বাস্তবে প্রচারের আলোয় না থেকেও একজন গরিব মুমূর্ষু রোগীর পাশে থেকে তাঁকে সুস্থ করে তোলার ব্রত পালন করার লোকজন ক’জন আছে বলুন তো? রঙিন কাপড়ের ম্যারাপ বেঁধে কিছু সাজিয়ে-গুছিয়ে আনা ‘গরিব মানুষের’ হাতে সাহায্য তুলে দিয়ে ক্যামেরার ফ্লাশ -বাল্বের ঝলকানিতে হাসি-হাসি মুখে খবরের কাগজের পাতায় প্রকাশিত ছবি দেখে আপ্লুত হওয়া যায়। প্রচার পাওয়া যায়, কিন্তু সত্যি কোনও গরিব মানুষকে সাহায্য করা যায় না। সেইসব গরিব মানুষকে সাহায্য করতে হলে রাস্তায় নামতে হবে। আমজনতার মধ্যে মিশে যেতে পারলেই দেখা যাবে এমন গরিব মানুষকে। যারা সত্যি সাহায্যের জন্য তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে যদি একটু সাহায্য পেতেন তাহলে বাকি জীবনে খেটে খাওয়ার রাস্তা খুঁজে পেতে পারতেন। অথচ সেইসব হতদরিদ্র মানুষগুলির দিকে নজরই নেই আমাদের তথাকথিত রাজনীতিবিদদের।
২) আমাদের সংবাদ প্রভাকর টাইমস অফিসে এই ঘটনাটি বিস্তারিত লিখে পাঠান তাদেরই একজন যারা এই গরিব মুমূর্ষু মানুষটির পাশে থেকে তাকে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। অবশেষে সেই মানুষটি স্বস্তি পেয়েছেন এই ভেবে যে -গরিব ইব্রাহিম মন্ডলের নষ্ট হতে যাওয়া চোখটি বেঁচে গেছে। আবার সে আগের মতো দেখতে পাবে।
৩) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেড়াচাঁপার বাসিন্দা ইব্রাহিম মন্ডল। পেশা তাঁর কাগজ কুড়ানো। অনেকেই এই কাগজ কুড়ানিদের অবজ্ঞার চোখে দেখে। কিন্তু তারাও তো মানুষ। পেটের তাগিদে তারা আজ এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। মধ্যমগ্রামের সেই সমাজসেবী জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এই ছেলেটিকে দেখতে পায়- চোখে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে নানা জায়গায়। যদি কেউ তাকে একটু চিকিৎসার জন্য সাহায্য করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই সমাজের, দুর্ভাগ্য এই সব কাগজ কুড়ানিদের মতো গরিব মানুষগুলির। যাদের আমরা শুধু অবজ্ঞাই করতে শিখেছি পারিনি তাদের দিকে বিপদের সময় একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। তা না হলে চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সে ছুটে গেছে মধ্যমগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে মধ্যমগ্রাম পুরসভা থেকেও।যদিও পুরসভা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
৪) জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এই সময় একেবারেই ভেঙে পড়েন। কিন্তু তিনি জানান, “আমি হাল ছাড়িনি। দেখলাম ছেলেটি চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছে। শুধু বলছে, দাদা, আমি কিছু দেখতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে।এবার তবে কি চোখ হারাতে হবে? সেইসময় আমি ঠিক করলাম-একবার শেষ চেষ্টাই করে দেখা যাক। এবার যদি হয় হবে, তা না হলে উপরওয়ালা যা করার করবেন। এই ভেবে আমি ছেলেটিকে নিয়ে গেলাম মধ্যমগ্রাম স্পেকট্রা ফাউন্ডেশন-এ। সেখানে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললাম।সব শুনে তাঁরা রাজী হয়ে গেল ছেলেটির চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করতে।মনে মনে ধব্যবাদ জানালাম সেই শক্তিকে। যে কিনা এই অসহায় ছেলেটির চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে।ইব্রাহিমকে নিয়ে যাওয়া হল ভিতরে। ডা. অনন্যব্রত দাস নিজে চিকিৎসার ভার তুলে নিলেন।জানিয়ে দিলেন এই ছেলেটির চিকিৎসার খরচ লাগবে না। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই হবে তার চিকিৎসা।
ইব্রাহিমের আর চোখ হারানোর ভয় নেই
৫) এখন ইব্রাহিম অনেকটাই চিন্তামুক্ত। আজ আর তার চোখ হারানোর ভয় নেই। ইব্রাহিমদের মতো গরিব মানুষদের ফিরিয়ে দেওয়ার লোক যেমন আছে ঠিক তেমনই আছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মানুষজনও। জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. অনন্যব্রত দাসের মতো মানুষের প্রয়োজনীয়তা এই সমাজের কাছে তাই আরও বেড়ে গেল। ইব্রাহিমের চোখ যেমন তাঁরা বাঁচাতে সফল হয়েছেন তেমনই এই মরচে ধরা সমাজে তাদের এই প্রয়াস কিন্তু দৃষ্টান্ত হয়ে রইল আগামিদিনের জন্য।
Published on: মার্চ ২৬, ২০১৯ @ ১৮:০১