নারকীয় ! হুলা পার্টির সদস্যকে দুই দিক দিয়ে ঘিরে ফেলে শুঁড়ে আঁছড়ে পিষে মারল হাতির দল

বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: জানু ৩০, ২০১৮ @ ২০:৩৫

এসপিটি নিউজ, নয়াগ্রাম, ৩০ জানুয়ারিঃ কোনওভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না দাঁতাল হাতির দলকে। দলবদ্ধ ভাবে তাদের হামলা সমানে চলছে মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম এলাকা জুড়ে।বন দফত্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলা যেতেই পারে। গোটা শীতের মরশুমে এই নিয়ে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে দাঁতালের হামলায়। সোমবার রাতের ঘটনা ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে নারকীয় ঘটনা। ২০ বছর ধরে হুলাপার্টির কাজ করা ৪৫ বছরের বিজয় হেমব্রমকে যেভাবে হাতির দল পিষে মারল তা চোখে দেখা যায় না। তিনিটি হাতি তাদের সহকর্মীকে তুলে আঁছাড় দিয়ে পায়ের তলায় পিষে মারছে দেখেও কিছু করতে পারেনি হুলাপার্টির সদস্যরা। হাতির দল সরে গেলে শুধু সহকর্মীর দেহটি তুলে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেটুকু সময় লাগে। এরপর তো চিকিৎসক বিজয়ের মৃত্যু ঘোষণা করতে যে টুকু সময় নেন।নারকীয় ঘটনা ঘটে ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম ব্লকের বড়নিগুই গ্রামপঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর গ্রামে।

বিজয় হেমব্রমের স্ত্রী প্রতিমা হেমব্রম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ২০ বছর ধরে হুলাপার্টির সদস্য হিসেবে হাতি তাড়ানোর কাজ করছে আমার স্বামী বিজয় হেমব্রম। সোমবার রাতে ব দফতরের থেকে দেকে নিয়ে যায় হাতী তাড়ানোর জন্য। শ্রীরামপুর গ্রামে হাতি ঢুকে পড়েছে বলে তাকে বেরিয়ে যেতে হয়।সেই যাওয়াই কাল হল। কে জানত, ও আর কোনওদিন ঘরে ফিরে আসবে না! বলে কাঁদতে থাকেন প্রতিমা।

ঘটনায় প্রকাশ, সোমবার রাতে শ্রীরামপুর গ্রামে ৪০টি দাঁতাল হাতি ঢুকে পড়ে তাণ্ডব শুরু করে। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই খবর পেয়ে বন দফতরের কর্মীরা ২৫জন হুলাপার্টির সদস্যদের নিয়ে হাতি তাড়াতে যায়। রাত তখন একটা। হাতির দলটিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল হুলা পার্টির সদস্যরা। জঙ্গলের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছিল। কিন্তু সেইসময় হঠাৎ হাতির দলটি হুলাপার্টিকে তাড়া করে। হাতির তাড়া খেয়ে তারা ছুটে পালাতে থাকে। এর মধ্যে অসাবধানবশত বিজয় হাতির দলের মাঝে আটকে পড়ে।সে বুঝতে পারে তার আর কিছুই করার নেই। দূরে দাঁড়িয়ে তার সহকর্মীরা দেখেন সেই মর্মান্তিক দৃশ্য। বিজয়কে ঘিরে ফেলেছে সামনে দুটি ও পিছনে একটি দাঁতাল হাতি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা শুঁড় দিয়ে বিজয়কে পাঁছিয়ে নিয়ে তুলে আঁছাড় মারে। এর পর তারা পায়ের তলায় পিষে মেরে ফেলে বিজয়কে।

হাতির দলটি চলে গেলে বিজয়কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।মৃত বিজয়ের বাড়ি মলম গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়িমারি গ্রামে। মৃত্যুর খবর পেয়েই শোকে পাথর গেছেন বিজয়ের স্ত্রী প্রতিমা হেমব্রম ও দুই ছেলে ডমন আর শিখর হেমব্রম।

মঙ্গলবার সকালে নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত হাড়িমারি গ্রামে বিজয় হেমব্রমের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে বলেন তারা সবসময় তাদের পরিবারের পাশে আছেন। একই সঙ্গে তিনি পাশে থাকা বন দফতরের আধিকারিকদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন তারা যেন বিজয়বাবুর এক ছেলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।

বন দফতরের পক্ষ থেকে অবশ্য হাতির হামলায় হত বিজয়বাবুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তারা হাতির পাল দাপিয়ে বেড়ানো এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে জানিয়ে দেয় তারা যেন একটু সাবধানে থাকেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 1