Published on: আগ ৩০, ২০১৮ @ ২৩:৫২
এসপিটি নিউজ, বারুইপুর, ৩০ আগস্টঃ কাজটা করার আগে ভেবেছিল একরকম। আর কাজটা করার পর হয়ে গেল আর এক রকম। ভেবেছিল নিজের দোকানে ডাকাতির ছক সাজিয়ে কর্মচারীকে দিয়ে ডাকাতি করিয়ে বীমা কোম্পানির কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করবে। কিন্তু সোনার দোকানের মালকের মূর্খামি সব ধরা পড়ে গেল গোয়েন্দা পুলিশের নজরে। দেনার দায় থেকে বাঁচতে গিয়ে সমূলে একপ্রকার উৎপাটিত হয়ে গেল খোদ সেই সোনার দোকানের মালিক নিজেই। বারুইপুরের চম্পাহাটিতে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে গেছে এলাকায়।এ যেন আর এক কালিদাসের গল্প।
বারুইপুরের চম্পাহাটি ডাকাতির কিনারা করতে গিয়েই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের ওসি লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি দল ও বারুইপুর থানার আই সি অরূপ ভৌমিক সহ এস আই সৌমেন বিশ্বা্সের নেতৃত্বে বিশেষ দল বুধবার রাতে বিশেষ তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করে সোনার দোকানের মালিক সহ চারজনকে।একই সাথে উদ্ধার করা হয় দোকান থেকে পরিকল্পনা মাফিক লুঠ হওয়া ১২ কিলো রূপো। বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বৃহস্পতিবার দুপুরে বারুইপুর থানায় এক সাংবাদিক বৈঠক করে এই কথা জানান। ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষ, এসডিপিও অর্ক ব্যানার্জি। ধৃত দোকানের মালিক দেব কুমার দেব নাথ ,কর্মচারি সোমরান গাজি সহ তার দাদা আব্দুর রশিদ মোল্লা ,আব্দুর রহিম গাজি কে বৃহস্পতিবার দুপুরে বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
সাংবাদিক বৈঠকে জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা জানান, গত ২৫ আগস্ট চম্পাহাটি স্টেশন সংলগ্ন দেবনাথ সিলভার হাউস নামক সোনার দোকানে রূপো লুঠের একটি অভিযোগ হয়। অস্ত্র দেখিয়ে লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও বারুইপুর থানা পুলিশের একটা দল গঠন হয় । দোকানের মালিক দেবকুমার দেবনাথ বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদে কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে। বাজারে ও ব্যাঙ্কে মালিক দেব কুমার দেবনাথের প্রচুর দেনা তা কভারের জন্য নিজের দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা সাজায় দেবনাথবাবু নিজেই । তার বীমা করা ছিল ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। এটা আদায় করার জন্য ঠান্ডা মাথায় নিজের কর্মচারিকে সঙ্গে নিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়।এর সাথে ডাকাতির জন্য তিনি নিজেই তিন ব্যাক্তিকে ঠিক করেছিলেন, অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর কথাও সাজানো হয়। এর পর পারিপার্শ্বিক সুত্র ও মোবাইল ট্রাক করে দেব কুমার বাবু সহ তার কর্মচারি সহ তিন জন কে ধরে পুলিশ । নিজেই দোকানে আগে থেকে লাল ব্যাগে লুকিয়ে রাখা ১২ কিলো রূপো ও উদ্ধার হয় । এই ব্যবসার সাথে আর কারা জড়িত, পুরানো ঘটনার যোগ আছে কিনা তাও পুলিশ খতিয়ে দেখবে।
তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পারে, দোকানের মালিক বারুইপুরের বাসিন্দা দেব কুমার দেবনাথ ২০ বছর ধরে রূপোর পাইকারি কারবার চালান। ৫ থেকে ৬ মাস আগে ব্যবসার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণের পাশাপাশি নিজের সুদের কারবারের জন্য বাজার থেকে ১৭ থেকে ১৮ লক্ষ সুদ নেন। এর জন্য প্রতি মাসে ব্যাঙ্কে ৫০ থেকে ৫৩ হাজার সুদ বাড়তে থাকে। পাওনাদাররা তার বাড়িতে ভিড় করতে থেকে । এই বিপুল পরিমান দেনার চাপ থেকে বাঁচতে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বসে নিজের দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। ২৫ আগস্ট ডাকাতির আগে ২৩ আগস্ত নিজেরা এই ব্যাপারে পরিকল্পনা করেন । দেব কুমার বাবু ভেবেছিলেন তার ইনস্যুরেন্স করা ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পেয়ে যাবেন পরে ক্লেম দেখিয়ে । কিন্তু সব গোল পাকিয়ে গেল।
তার দোকানের কর্মচারি ম্যানেজার ধোপাগাছির সোমরান গাজিকে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেন। সে ৮ বছর কাজ করে মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতন পেত। সে মালিকের এই পরিকল্পনা লুফে নেয় বড় লাভের আশায়। একই সঙ্গে তার দাদা আব্দুর রশিদকেও সে ডেকে নেয় । এই আব্দুর রশিদ মালিক দেব কুমার দেব নাথের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা সুদে নিয়েছিল । দেবনাথ টোপ ফেলে- এই কাজ করে দিলে আর তাকে টাকা দিতে হবে না। এরপর অপারেশন।
কিন্তু পুলিশ তদন্তে নেমে মোবাইল কল রেকর্ড ,ম্যাসেজ দেখে জানতে পারে ডাকাতির আসল নাটের গুরু মালিক নিজেই।
Published on: আগ ৩০, ২০১৮ @ ২৩:৫২