‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ এই দৃষ্টিভঙ্গীকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি

Main কোভিড-১৯ দেশ রাজ্য স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান
শেয়ার করুন

বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষক মেডিক্যাল ট্যুরিজম বানানোর সুযোগ রয়েছে ভারতের সামনে

Published on: মার্চ ৬, ২০২৩ @ ২১:৩০
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ: দেশ স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আজ এক উন্নত স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নিয়েছে। সেই দিকে নজর দিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে। তাই স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়টি আজ শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন না রেখে এটিকে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী হিসাবে গড়ে তোলার উপর সরকার জোর দিয়েছে। অতিমারী পরবর্তীকালে সার বিশ্ব স্বাস্থ্যের মতো বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে ভারত এক ধাপ এগিয়ে ‘এক অভিন্ন পৃথিবী, এক অভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ এই দৃষ্টিভঙ্গীকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। তাই এটিকে শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর তাই বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষক মেডিক্যাল ট্যুরিজম বানানোর সুযোগ আমাদের সামনে রয়েছে।স্বাস্থ্য চিকিৎসা গবেষণা সম্পর্কিত এক বাজেট পরবর্তী ওয়েবিনারে ভাষণ দেওয়ার সময় এই কথাগুলি বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

করোনা গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছে এবং শিখিয়েছে

স্বাস্থ্য বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন- “আমি কোভিড পূর্ববর্তী এবং অরিমারী পরবর্তী এই দুটি দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে বিচার করা উচিত। করোনা গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছে এবং শিখিয়েছে যে যখন এমন ভয়াবহ সংকট দেখা দেয় তখন সমৃদ্ধ দেশের সুব্যবস্থাও ধ্বংস হয়ে যায়। বিশ্বে আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর গুরুত্ব বেড়েছে। কিন্তু ভারত এক ধাপ এগিয়ে বিশ্বের সামনে – ওয়ান আর্থ, ওয়ান হেলথ দৃষ্টিভঙ্গী রেখেছে। কারণ, মানুষ, প্রাণী, বৃক্ষ যাই হোক না কেন সকলেরই বাঁচার অধিকার আছে, আর সেদিকে আমাদের সকলের দৃষ্টি দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।”

অতিমারীর সময় আমরা দেখেছি যোগান-শৃঙ্খল কিভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ঐ সময় দুর্ভাগ্যবশতঃ ওষুধ, চিকিৎ্সা, চিকিৎসা সম্পর্কিত সাজ-সরঞ্জামের মতো জীবনদায়ী উপায়গুলি মুষ্টিমেয় কিছু দেশের করায়ত্ত হয়ে পড়েছিল, তাও আমরা লক্ষ্য করেছি।আমরা অনবরত চেষ্টা করছি যে ভারতের বিদেশের উপর নির্ভরতা যতটা সম্ভব যেন কম থাকে। এই বিষয়ে আপনাদের সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের খুবই বড় ভূমিকা আছে।বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

আমাদের নাগরিকদের এক লাখ কোটি রুপিয়া সাশ্রয় হয়েছে

আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্পে পাঁচ লাখ রুপি বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। এই সুবিধা দেওয়ার পিছনে আমাদের মনের মধ্যে এই ভাবনা ছিল যে দেশের কোটি কোটি রোগীর চিকিৎসার পিছনে যে ৮০ হাজার কোটি রুপি খরচ হত তা থেকে বেচেছে। আগামিকাল ৭ মার্চ দেশ জন ঔষধি দিবস পালন করতে চলেছে। আজ দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার জন ঔষধি কেন্দ্র আছে। এই কেন্দ্রগুলিতে বাজারের থেকে খুবই সস্তায় ওষুধ মেলে। এর ফলে আজ গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শুধু ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ২০ হাজার কোটি রুপি বেচেছে। এর ফলে এই দুটি যোজনাতে এ পর্যন্ত ভারতে আমাদের নাগরিকদের এক লাখ কোটি রুপিয়া সাশ্রয় হয়েছে।

দেড় লাখ হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার তৈরি হচ্ছে

কঠিন রোগের ক্ষেত্রে দেশে সুন্দর ও আধুনিক হেলথ পরিকাঠামো হওয়া ঠিক ততটাই আবশ্যক। সরকারের এই বিষয়ে একটি ফোকাস আছে। যেখানে লোকজন ঘরের পাশেই টেস্টিং সুবিধা পাবে। প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা যাতে পায় তারজন্য দেশজুড়ে দেড় লাখ হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার তৈরি হচ্ছে। এই সেন্টারে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হার্ট সংক্রান্ত কঠিন রোগের স্ক্রিনিং-এর সুবিধা থাকছে।

ছোট শহরে হাসপাতাল

পিএম আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর মতো ক্রিটিক্যাল হেলথ ইনফ্রাকে ছোট শহরে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য ছোট শহরে হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। হেলথ সেন্টারের সঙ্গে জুড়ে থাকা এক গোটা ইকো সিস্টেম বিকশিত হতে চলেছে। এজন্য হেলথ এন্টারপ্রিনিয়র্স, ইনভেস্টর, প্রফেশনালদের অনেক নতুন সুবিধা তৈরি হতে চলেছে। হেলথ ইনফ্রার সাথে সরকারের প্রাথমিকতা হিউম্যান রিসোর্সেস উপরেও পড়ছে।

২৬০ নয়া মেডিক্যাল কলেজ

গত বছরে ২৬০ নয়া মেডিক্যাল কলেজ খোলা হয়েছে। এর ফলে মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সংখ্যা ২০১৪ সালের তুলনায় আজ দু’গুন হয়েছে। েই কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন- আপনারাও জানেন ভালো ডাক্তারদের জন্য ভালো টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। এজন্য গত বছরের বাজেটে নার্সিং ক্ষেত্রের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের পাশেই ১৫৭ নয়া নার্সিং কলেজ খোলা হয়েছে। মেডিক্যাল হিউম্যান রিসোর্সের জন্য এটা একটা বড় উদ্যোগ। এ শুধু ভারতের জন্যই নয় সারা বিশ্বের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রেও কাজ করবে।

ঘরে বসেই ১০ কোটি মানুষ ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়েছে

ডিজিটাল হেলথ আইডি-র মাধ্যমে দেশবাসীকে সময় মতো হেলথ কেয়ারের সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন- এর ফলে ঘরে বসেই ১০ কোটি মানুষ ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়েছে। এবার ফাইভজি টেকনোলজির মাধ্যমে এই সেক্টরে স্টার্টআপদের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ড্রোন টেকনোলজির ফলে ওষুধের সরবরাহ এবং টেস্টিং-এর সঙ্গে জুড়ে থাকা লজিস্টিক-এ এক ক্রান্তিকারী বিপ্লব আসতে দেখছি। এটা ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ারকে নতুন রূপ দেবে। আমাদের এন্টারপ্রনিয়ারদের এটা সুনিশ্চিত করতেই হবে যে টেকনোলজি বিদেশ থেকে নয় আমাদের দেশের টেকনোলজিকেই ব্যবহার করতে হবে। আত্মনির্ভর হতেই হবে।

ফার্মা ও মেডিক্যাল ডিভাইস সেক্টরে সম্ভাবনা

ফার্মা ও মেডিক্যাল ডিভাইস সেক্টরে সম্ভাবনা দেখে গত কয়েক বছরে কিছু কিছু নয়া যোজনা শুরু হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ টেকনোলজি হাই এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং  ও রিসোর্সেস-এর জন্য স্কিল মেন পাওয়ারের উপর কাজ শুরু করে দিয়েছে। আইআইটি  এবং অন্য সংস্থায় মেডিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং-এর উপকরণের জন্য বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা তার মতো বিকল্প কোর্স চালানো হবে। এত প্রাইভেট সেক্টরের যোগদান কিভাবে হবে ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাকাডেমিয়া এবং সরকার এই সব কিছুর মধ্যে বেশি করে যোগসূত্র কিভাবে গড়ে উঠে সেদিকে নজর দিতে হবে।

কোভিড কালে ফার্মা সেক্টর দেখিয়েছে গোটা বিশ্বের বিশ্বাস তারা যে অর্জন করেছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব। এটাকে ক্যাপিটালাইজ করতেই হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠান আমাদের সিদ্ধিকে রক্ষা করতেই হবে। উপরন্তু আমাদের উপর আরও বিশ্বাস বাড়াতে হবে।

১০ লাখ কোটির গন্ডি পার

আজ ফার্মা সেক্টরের মার্কেট সাইজ চার লাখ কোটি। এতে যদি প্রাইভেট সেক্টর, অ্যাকাডেমিয়া ও আমরা সকলে মিলে যোগসূত্র গড়ে তুলি তাহলে এই সেক্টর ১০ লাখ কোটির গন্ডি পার করে ফেলবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব মিলেটস রূপে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে

রক্তাল্পতা ও অপুষ্টির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মিলেট তথা বাজরা যাতে স্থান পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বর্তমান বছরটিকে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব মিলেটস রূপে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আয়ুর্বেদের প্রয়োজনীয়তা আজ গোটা বিশ্ব অনুভব করছে

পিএম মাতৃবন্দনা যোজনা, মিশন ইন্দ্রধনুষ কার্যক্রমে আমরা সুস্থ মাতৃত্ব ও সুস্থ শৈশব সুনিশ্চিত করেছি। আয়ুর্বেদ, ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট এরা মানুষকে রোগের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করেছে। ভারতের সঙ্গে জুড়ে থাকা আয়ুর্বেদের প্রয়োজনীয়তা আজ গোটা বিশ্ব অনুভব করছে। ভারতের উদ্যোগের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের সঙ্গে যুক্ত গ্লোবাল সেন্টার ভারতেই করেছে। এজন্য হেলথ সেক্টরে স্টেকহোল্ডারদের এবং অবশ্যই আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এভিডেন্স বেজ রিসার্চকে আমাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধুমাত্র পরিণামের চর্চা পর্যাপ্ত নয়। প্রমাণ ততটাই আবশ্যক। এজন্য আয়ুর্বেদ এর সঙ্গে কাজ করা মানুষদের যুক্ত হতে হবে। তাদের এগিয়ে আসতে হবে।বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মেডিক্যাল ট্যুরিজম কর্মসংস্থানের অনেক বড় মাধ্যম হতে চলেছে

সবশেষে প্রধানমন্ত্রী ভারতের এই নয়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। এই প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন যে ভারতের এই স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি আজ শুধুমাত্র দেশবাসীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বিশ্বকে জুড়তে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষক মেডিক্যাল ট্যুরিজম বানানোর জন্য এক বড় সুযোগ আমাদের সামনে রয়েছে। মেডিক্যাল ট্যুরিজম এক বিশাল বড় সেক্টর ভারতে আসতে চলেছে। এটা দেশে কর্মসংস্থানের অনেক বড় মাধ্যম হতে চলেছে। সকলের চেষ্টায় আমরা ভারতে বিকশিত ভারতে এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সুস্থতার ইকো সিস্টেম তৈরি করতে পারি।

Published on: মার্চ ৬, ২০২৩ @ ২১:৩০


শেয়ার করুন